• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

জাকাত যেসব খাতে ব্যয় করবেন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৯  

জাকাত ইসলামী শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো জাকাত। জাকাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ কোনো বস্তুকে পরিশুদ্ধকরণ, প্রবৃদ্ধিকরণ, পবিত্রতা, সুসংবদ্ধকরণ ইত্যাদি। আর জাকাতের শাব্দিক অর্থ পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। কোরআনে শব্দটি আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।


জাকাত বলতে ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করাকে বোঝায়। পারিভাষিক অর্থে জাকাত হলো, সাহেবে নিসাবের ধন-মাল, জমির ফসল ও খনিজ সম্পদের ওপর ইসলামী শরিয়াহ নির্ধারিত অংশ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করা। আল্লাহ তাআলা জাকাত ব্যয়ের খাতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। জাকাতের সম্পদ ব্যয়ের খাত মোট আটটি—

এক. ফকির, যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দুই. মিসকিন, যাদের কোনো সম্পদ নেই। তিন. ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। চার. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত প্রদান। তবে এ খাতটি বর্তমানে আর প্রযোজ্য নয়। পাঁচ. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ছয়. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুণ ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি। সাত. যোদ্ধা, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরিব মানুষ। আট. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।

♦ কোনো ধনী ব্যক্তি যদি তার জাকাতের টাকা দিয়ে কোনো গরিবকে শিক্ষা অর্জন ও তাবলিগ ইত্যাদি দ্বীনি কাজে পাঠায়- তাহলে তার জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অনেক আলেম বলেন, এসব ক্ষেত্রে বরং সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে।

উল্লেখ্য, বর্ণিত খাতগুলোর মধ্যে জাকাত ইত্যাদি উসুলে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া সব ধরনের লোক গরিব হওয়ার কারণেই জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত। আর গরিবকে শর্তহীনভাবে জাকাতের অর্থ প্রদান জরুরি এবং সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের পূর্বশর্ত। অতএব কাউকে কোনো কাজের জন্য জাকাতের টাকা দিয়ে বাধ্য করা উচিত নয়। বরং শর্ত করাও শরিয়তসম্মত নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৫, ফাতহুল কাদির: ২/২০৫)

♦ জাকাতের টাকা পাওয়ার উপযুক্ত কোনো গরিবকে বিনা শর্তে ও বিনা স্বার্থে মালিক বানিয়ে দেওয়া- জাকাত আদায় হওয়ার জরুরি শর্ত। (তাবয়িনুল হাকায়েক: ১/৩০০)

♦ শরিয়তের বিধানমতে জাকাতের উপযোগী গরিব-অসহায় ব্যক্তিকে জাকাতের টাকার নিঃশর্তে মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের পূর্বশর্ত। মালিক বানানো ছাড়া জাকাতের টাকা ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না এবং ব্যয়কারী গোনাহগার ও দায়ী হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৮৮, মাজমাউল আনহুর: ১/৩২৮)

♦ শরিয়তের দৃষ্টিতে জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাত পাওয়ার উপযোগী ফকির-মিসকিনকে নিঃস্বার্থে মালিক বানিয়ে দেওয়া পূর্বশর্ত। তাই জাকাতের টাকা দিয়ে গরিবদের ভরণ-পোষণ বাবদ খরচ করা যাবে। আর যে সমস্ত খাতে খরচ করলে গরিবদের মালিকানায় যায় না, যেমন- ঘর বানানো, পানি ও বিদ্যুৎ বিল, শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি খাতে জাকাতের টাকা খরচ করা যাবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৭০, আদ দুররুল মুখতার: ২/৩৪৪)

♦ কোনো সংগঠনকে দেওয়ার দ্বারা জাকাত আদায়ের শর্ত পূরণ হয় না, তাই জাকাত আদায় হবে না। (আদ দুররুল মুখতার: ২/৩৪৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৮৮)

♦ জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতগ্রহীতা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত নয়, বরং স্বেচ্ছায় খরচ করার বুঝ হয়েছে—এমন হলেই তাকে জাকাত দেওয়া যাবে এবং এতে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, নাবালেগ ছেলের পিতা যদি ধনী হয়, তাহলে ছেলেকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪৯, ২/৩৫৬০

♦ নিজের ঊর্ধ্বতন যথা বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী ও তাদের বরাবর উপরে এবং অধঃস্তন যথা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও তাদের বরাবর নীচে কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে দিতে পারবে না। (ফাতহুল কাদির: ২/২০৮)

♦ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে ভাই-বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা ও তাদের সন্তানদেরকে জাকাতের টাকা দিতে পারবে। (ফাতহুল কাদির: ২/২০৯, রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪২)

♦ মেয়ের জামাই ও ভগ্নিপতিকে জাকাত দেওয়া যাবে, যদি সে জাকাতের উপযুক্ত হয়। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬)
 
♦ জাকাতের টাকা দিয়ে ক্রয়কৃত জিনিষ পরবর্তিতে নিজে নিসাবের মালিক হয়ে যাওয়ার পরও নিজে ব্যবহার করতে পারবে। (ফাতহুল কাদির: ২/২০৫)
 
♦ জাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দেওয়া জাকাত আদায়ের শর্ত। তাই মালিক না বানিয়ে দাওয়াত খাওয়ানোর দ্বারা জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/২৫৭)

♦ দোকান, কারখানা বা বাড়ির কর্মচারী যদি গরিব ও জাকাত নেওয়ার উপযুক্ত হয় তাহলে তাদের নিঃস্বার্থ জাকাত দেওয়া জায়েয হবে, অন্যথায় জায়েয হবে না। তবে তাদের জাকাত দেওয়ার কারণে তাদের প্রাপ্য নিয়মিত পারিশ্রমিকের মধ্যে কোনো ব্যাঘাত যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ জাকাত দ্বারা কারো হক আদায় করা যায় না। বেতন যেহেতু চাকরিজীবীর প্রাপ্য হক, তাই জাকাত দ্বারা বেতনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবে না। (মুলতাকাল আবহুর: ১/২৮৪, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম: ৬/২৪৫)