• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

এক চাবিতেই খুলল ব্যাংকের দুটো লকার!

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৩  

গ্রাহকের চাবি ছাড়াই কেবল ব্যাংক কর্মকর্তার চাবিতেই খুলল যশোরের জনতা ব্যাংকের ভাড়া নেয়া লকার। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ রায়ের ছেলের নামে ভাড়া নেয়া ছিল ওই লকারটি। সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে এ ঘটনা ঘটার পর লকারে সব মালামাল জিম্মায় নিয়েছেন সংসদ সদস্য রঞ্জিত কুমার রায়।

লকার খোলার বিষয়ে ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায় তার স্ত্রী নিয়তি রানী রায়কে নিয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখায় নিয়তি রানীর নামে ভাড়া নেয়া লকার থেকে মালামাল নিতে তারা ব্যাংকে গিয়েছিলেন। ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী নিয়তি রানীর লকার না খুলে ‘ভুল’ করে তাদের ছেলে রাজীব রায়ের নামে ভাড়া নেয়া লকার খুলে ফেলেন। দুটো চাবি ছাড়া লকার খোলার কথা না থাকলেও একটি চাবিতে খুলে যাওয়ায় ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্য।

এরপর ওই লকারের নিরাপত্তা নেই দাবি করে গচ্ছিত মালামাল নিজের জিম্মায় নিতে চান রনজিৎ রায়। ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা এজিএম ইমরান হোসেন লিখিত দেয়ার কথা বলেন। তখন সংসদ সদস্য খাতায় স্বাক্ষর করে নিতে বলেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা গড়িমসি করলে সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় ব্যাংকে হইচই পড়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংকে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মুঠোফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালামাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখার এজিএম ইমরান হোসেন বলেন, ‘দুপুরে সংসদ সদস্য রনজিৎ রায় নিজের স্ত্রীর নামে ভাড়া করা লকার থেকে মালামাল নিতে ব্যাংকে আসেন। ব্যাংকের একজন এজিএম ভুল করে নিয়তি রানীর লকার না খুলে রাজীব রায়ের লকার খুলে ফেলেন। এ সময় রাজীব রায়ের লকারের মালামাল নিজের জিম্মায় নিতে চান সংসদ সদস্য রনজিৎ রায়। এ বিষয়ে লিখিত দিতে বললে তিনি ব্যাংকের শত শত লোকের সামনে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। পরে রাজীব রায়ের সম্মতিতে তার লকারের মালামাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেয়া হয়। এ বিষয়ে ব্যাংকের খুলনা বিভাগীয় জিএম সাহেবকে জানানো আছে।

এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য রনজিৎ রায় বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে আমাদের পরিবারের নামে লকার ভাড়া নেয়া আছে। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। একটা থাকে আমাদের কাছে, অপরটি থাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু আমাদের চাবি ছাড়াই আমার ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে? লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করে ওই লকারের মালামাল নিতে চাইলে লিখিত দিতে বলেন। আমি বলেছি, বাঘারপাড়ায় আমার জনসভা রয়েছে, আপনারা খাতায় আমার স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। তাতে তারা সম্মতি না দিয়ে আমাকে আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। তখন আমি রাগ করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে আসি। পরে তারা মালামালগুলো আমার জিম্মায় দেন। এ সময় ব্যাংকের কাউকে ধাক্কা দেয়া হয়নি।’

ওই লকারের মালিক রাজীব রায় বলেন, ‘ভুল করে আমার লকার খুলে ফেলার সুযোগ নেই। কারণ, আমার মায়ের লকারের চেয়ে আমার লকার তিনগুণ বড়। লকার দুটোর অবস্থানও দুই প্রান্তে। এ ছাড়া আমার চাবি ছাড়াই লকার খোলা গেলে ওই লকারের নিরাপত্তা কোথায়? ওই লকারে আমার ৩০০ থেকে ৪০০ ভরি সোনা ছিল। আমি এখন বাইরে আছি। যশোরে ফিরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। এ ছাড়া আমার বাবা একজন সংসদ সদস্য। তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।’

এদিকে লকারের নিরাপত্তার বিষয়ে এজিএম ইমরান হোসেন বলেন, ‘লকার দুটি চাবি দিয়েই খোলার কথা। কিন্তু গতকাল ব্যাংকের কাছে রক্ষিত চাবি দিয়ে তালা খোলার পর লকারটি খুলে যায়। এটি দুটি কারণে হতে পারে হয়তো তালা নষ্ট। অথবা এর আগে গ্রাহক লকার খুললেও তিনি তার অংশে তালাটি লাগাননি। যে কারণে ব্যাংকের অংশের তালা খুলতেই লকার খুলে গেছে। গ্রাহকের চাবি পেলে এটি পরীক্ষা করে দেখা হবে। সমস্ত বিষয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ তারাই গ্রহণ করবেন।’