• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

উদ্বোধনের অপেক্ষায় গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২  

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতুটি ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ জুন চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হবে। স্বপ্নপূরণ হতে যাওয়া সেতুটি ঘিরে শরীয়তপুরের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। অপেক্ষা এখন সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের।  

পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগের মেলবন্ধন নয় শরীয়তপুর জেলার উন্নয়নের প্রবেশ দ্বার। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৬ জুন থেকে সবার জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেবে সরকার। বদলে যাবে আমাদের শরীয়তপুরের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, এখানে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিনক অবস্থা ব্যাপক পরিবর্তন হবে। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সব প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগতভাবে উন্নয়ন হবে। রাজধানীর পাশাপাশি বদলে যাবে গ্রামের দৃশ্যপটও। 

বাংলাদেশে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না। শেখ হাসিনা দেশপ্রেম, মানবিকতাবোধ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য আজ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। উন্নয়নে শেখ হাসিনার ম্যাজিক কথাটি আজকে সারা বিশ্বব্যাপী যেভাবে আলোচিত হচ্ছে সেটা কিন্তু একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের অনেক গর্বের বিষয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা যেমন একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পেয়েছি, ঠিক তেমনি তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা বাংলাদেশ গড়ার ম্যাজিক কারিগর হিসেবে পেয়েছি। এই যে ম্যাজিক শব্দটা বলার জন্য মনে একটা শক্তি দরকার। বাংলাদেশকে একটা ধ্বংসস্তূপ থেকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু যেভাবে সব সেক্টরে বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছিলেন, ঠিক সে সময় পাকিস্তানি রয়ে যাওয়া কিছু কুচক্রীরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃসংশভাবে হত্যা করে। তাকে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নকেও হত্যা করা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্ অশেষ রহমতে সেই পরিবারের রয়ে যাওয়া দুই সদস্য শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা বেঁচে যাওয়ায় বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। তাই আমরা আজ এর সুফল দেখতে পারছি। 

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাংলাদেশের গৌরব, অহংকারের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে কাজ করে চলছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্তকারীর মুখে ছাই দিয়ে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করেছেন৷  আর এই সেতুর সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করবো আমরা শরীয়তপুরবাসী। তাই শরীয়তপুরবাসীর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা সরকারের সক্ষমতার প্রতীক। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল মাইলফলক। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে শত বাধা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন সততা, স্বচ্ছতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেম থাকলে কিছুই অসাধ্য নয়। ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মিলনমেলা এবং উৎসবের জনস্রোত হবে পদ্মার পার। এই জনস্রোত সফল করা আমাদের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ হাজির হবেন পদ্মার পাড়ে। পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের নাম। জাতীয় অহংকার। বিপুল আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ আত্মশক্তির এ প্রতীক দেখছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন। তাই ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মাওয়া ফেরিঘাটের কাছেই এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটির নির্মাণকাজ থমকে যায় বিএনপির রাজনৈতিক হীনম্মন্যতার কারণে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসেন। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এ সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণেও এ উন্নয়ন অংশীদাররা যুক্ত ছিল। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়ায়। এখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা মাথা নিচু করেননি। তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। পরে শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। আজ তা বাস্তবে পরিনত হয়েছে। 

তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ১০টি জেলার মধ্যে একটি। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা হবে। শেখ হাসিনা তাঁতপল্লিসহ সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে শরীয়তপুরে। সব মিলে শরীয়তপুর হবে উন্নত, আধুনিক ও স্বনির্ভর জেলা।