• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

চরাঞ্চলে রিভার ক্রসিং টাওয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৩  

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে সঞ্চাল লাইনের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে। পদ্মা নদী বেষ্টিত শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার ৫৭টি গ্রামের ১২ হাজর ৫৫৩ পরিবার ওই বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম নড়িয়ার নওপাড়ায় এলাকায় ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট রিভার ক্রসিং টাওয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার সাইফুল হক,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লতিফ সরদার, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যিৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আলী, শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান প্রমূখ।

শরীয়তপুর-মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, জাজিরার কুন্ডেরচর, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর, হাইমচরের নীলকমল, হাইমচর, গাজীপুর, মতলবের, একলাশপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ওই ইউনিয়নগুলোতে ৫৭টি গ্রামে জনবসতি রয়েছে। গ্রামগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। নৌকা ও ট্রলার যোগে গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। চরগুলোতে কোন সড়ক ছিল না। ছিলনা বিদ্যুতের সংযোগ। দীর্ঘ ও উত্তাল নদী পেরিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করা ছিল দুরূহ কাজ।

তবে ২০১৯ সালে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে প্রথমে বিদ্যুৎ নেওয়া হয় নড়িয়ার নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়নে। তবে পরে নওপাড়ায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ওই উপকেন্দ্র থেকে ৫৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চরাঞ্চলে ২৭৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর নড়িয়ার নওপাড়া ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় পদ্মা নদীর ওপর ৮টি পুলের (খুঁটি) মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে। ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাবে। বর্তমানে চরের সাড়ে ১২ হাজার গ্রাহকের ১ দশমিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২০ সালে সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়। তবে নদীভাঙন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থায়ীভাবে নদীর ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে, যেন চরের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পান।বিদ্যুৎ–সংযোগকে কেন্দ্র করে চরে কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভবনা আছে। ইতিমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১২টি সংযোগও নেওয়া হয়েছে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন,
সাড়ে ১২ হাজার গ্রাহক এই চরাঞ্চলে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। এখন রিস্ক ফ্রি করার জন্য রিভার ক্রসিং টাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করা হলো। এতে ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ১১০ টাকা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিতকায় চরাঞ্চলগুলো বিদ্যুৎ–সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। চরাঞ্চল কৃষি ও মৎসভিত্তিক শিল্পখাতের জন্য সম্ভাবনার জায়গা। কৃষি ও মৎস প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজ চলছে। এখন বিদ্যুৎ–সংযোগও এসে গেছে। এতে অবহেলিত এ জনপদ আশীর্বাদে রূপ নিয়েছে।