• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

৩৫ মণের আমেরিকান ষাঁড় ৩৮ লাখ!

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২১  

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশাল আকৃতির একটি আমেরিকান ব্রাহমা ষাঁড় বিক্রি হয়েছে ৩৮ লাখ টাকায়। ধূসর রঙের গরুটির ওজন ৩৫ মণ।

আকৃতিতে বিশাল বলেই এর নাম রাখা হয়েছে ভি-৮ (৮ সিলিন্ডারের ইঞ্জিন)। ভি-৮ এর বয়স ৫ বছর। জন্মের পর তিন বছর গরুটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বড় হয়। গত দুই বছর আগে কার্গো বিমানে করে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে তাকে আনা হয় বাংলাদেশে। এরপর দেশের আলো বাতাসেই বড় হয়েছে গরুটি।

প্রতিদিন ওর খাবার লাগে প্রায় এক হাজার টাকার।  

বিশালদেহী ভি-৮ খুবই শান্ত স্বভাবের। মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের এই গরুটিই হয়তো এবার ঈদের সবচেয়ে বেশি দামের গরু।

জানা গেছে, পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী গরুটি কিনেছেন। গরুটির প্রতিদিন চালের কুড়া, ভূষি, ভুট্টা ভাঙা ও ছোলাসহ ৩০ কেজি দানাদার খাবার প্রয়োজন হয়। এর পাশাপাশি আরো ৩০ কেজি কাঁচা ঘাস প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে ৬০ কেজি খাবার লাগে।

খামারটিতে বিশাল আকারের আরও বেশ কয়েকটি গরু আছে। সেগুলোও ঈদে বিক্রি করা হবে। পাঁচ-ছয় জন মানুষ গরুগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত।  

এ খামারের আরো একটি বড় গরুর নাম রানজা। বিশাল আকৃতির লাল গরুটিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন বছর আগে দেশে এসেছে। এর মোট বয়স ৬ বছর। ফলে বাকি তিন বছর বাংলাদেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছে সান্তা জাতের বিশাল গরুটি। এই গরুটির ওজন ১৫’শ কেজি বা সাড়ে ৩৭ মণ। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী গরুটি ৩৭ লাখ টাকা কিনে নিয়েছেন। প্রতিদিন কাঁচা ঘাস ও দানাদার মিলে এর ৬৫ কেজি খাবার প্রয়োজন হয়। ফলে দৈনিক ১ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়।

দাম এক লাখ টাকা কম হলেও লাল রঙের প্রকাণ্ডদেহীর ওজন ১৫’শ কেজি। উচ্চতা সাত ফুট, দৈর্ঘ্য ১৪ ফুটের কম নয়। হাতির সঙ্গে তুলনা করলে খুব বেশি বেমানান হবে না। গোল মাথায় শিং নেই। তাতে কি! যে কেউ সামনে গেলেই ভড়কে যাবে।  শিং না থাকলেও অচেনা মানুষ দেখে তেড়ে আসে সে। গলার ঝুল, লেজ মাটি ছুঁই ছুঁই। বিশাল দুটি কান নেমে গেছে ঘাড়ের কাছে। চলনবলনে রাজার মতো। হাঁটলে মনে হবে যেন হাতি হেঁটে আসছে।  

সাদিক এগ্রোফার্মে দায়িত্বে থাকা পরশ বলেন, এবারের খামারে সবচেয়ে বড় গরু দুটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আনা হয়েছে। একটি ৩৭ লাখ ও আরেকটি ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পুরান ঢাকার দু জন ব্যবসায়ী গরু দুটি কিনে নিয়েছেন। আমরা কোরবানির ঈদের আগের দিন গরু দুটি ডেলিভারি দেবো। ব্রাহমা জাতের গরুর বিশেষত্ব হলো, এরা কম খাবার খেয়ে বেশি মাংস দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ওয়েদার ও টেক্সাসের ওয়েদার প্রায় একই। ফলে আমাদের দেশে এই জাতের গরু আরো বেশি সম্প্রসারণ করা সম্ভব।  

সাদিক এগ্রোফার্মে এবার কোরবানির জন্য ২ হাজার ২০০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। কোরবানির গরু বিক্রির জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্ম বেশি ভূমিকা রাখছে। কোরবানির ওজন উল্লেখ করে কোরবানির গরুর ছবি আপলোড করা হচ্ছে ডিজিটাল প্লাটফর্মে। গত বছরের থেকে এবারের কোরবানির ঈদে মানুষের মধ্যে কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা বেশি বলে দাবি করেছেন খামারীরা।  

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, গত কোরবানি থেকে এবার মানুষের মধ্যে কোরবানি নিয়ে আগ্রহ বেশি। আশা করছি এবার ভালো বেচাকেনা হবে। এবার গরু বিক্রিতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম বেশি ভূমিকা রাখবে।  

গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর সারাদেশে কোরবানির জন্য লালন-পালন করা পশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫শটি।

এবার ঈদুল আজহায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া, ৪ হাজার ৭৬৫টি অন্য প্রজাতিসহ (উট, দুম্বা) সর্বমোট প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত আছে।  

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, দেশে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। করোনা সংকটের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে যেন কোনো কোরবানির পশু প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য সীমান্ত সিলগালা করা হবে। দেশের বাইরে থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বিজিবি ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সীমান্তবর্তী জেলায় অবৈধ বা বৈধপথে গবাদিপশু আসা বন্ধ করা হবে।  

কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে কোরবানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সময়ে সীমান্তপথে দেশের বাইরে থেকে গবাদি পশু আসতে দেওয়া হবে না। গবাদিপশু প্রবেশ রোধে বিজিবিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে জননিরাপত্তা বিভাগকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশে কোরবানিযোগ্য পর্যাপ্ত পশু মজুদ আছে। এবারের কোরবানির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনা ভাইরাস দেশে বাড়ছে। নানা বিষয়কে সামনে নিয়ে বাইরের দেশ থেকে কোরবানির পশু ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর জন্য যা কিছু করার তাই করবো। কোরবানির আগে ও পরে সীমান্ত সিলগালা করা হবে। প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, কোরবানির গরুর ট্রাকে চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করা হবে। কোরবানির পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করা করা হবে।