• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে শান্তিতে বসবাস

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২১  

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নওগাঁয় ভ‚মিহীন ও গৃহহীন পরিবাররা পেয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। ওইসব পরিবার আধাপাকা (সেমিপাকা) ঘর পেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন। বেড়েছে ঘরের চাহিদা। তবে জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় ঘরের বরাদ্দ কম হয়েছে। আগামীতে বেশি সংখ্যক ঘর বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন গৃহহীনরা।

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পুনবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ৪৭১ টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। 

এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে আসে ১ হাজার ৫৬টি ঘর। প্রতিটি আধাপাকা (সেমিপাকা) ঘরের বরাদ্দ ধরা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে ৪১৫টি ঘর। যেখানে প্রতিটি ঘরের বরাদ্দ ধরা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘর একই ধরনের। যেখানে আছে- দুইটি শয়ন কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমনস্পেস ও একটি বারান্দা। এসব ঘর প্রত্যেক পরিবারের জন্য আলাদা করে নির্মাণ করা হয়েছে।

এসব ঘর ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, অন্যের বাড়ি-রাস্তার পাশে ও হাটের খোলা জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা, দিনমজুর, আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রোদ বৃষ্টি আর ঝড় মাথায় নিয়ে যারা এতদিন অন্যের জায়গায় বসবাস করতো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষিকী উপলক্ষে এসব অসহায়দের এখন পাকা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। 

সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের আবাদপুর আশ্রয়ণে বসবাসরত রিনা বেগম বলেন, গত ২০ বছর আগে দিনমজুর স্বামী রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর কয়েক বছর বোনের বাড়িতে ছিলাম। সেখানে জায়গা না হওয়ায় বাবার বাড়িতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতাম। এরই মধ্যে সংসারে আসে তিন মেয়ে। স্বামীর আয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে। দিনমজুর স্বামী কখনো ট্রাকে শ্রমিকের কাজ, কখনো বা ভ্যান ও রিকশা চালানোর কাজ করে।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর কুমুরিয়া গ্রামে অন্যের জমিতে এক আম বাগানে টিন দিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতাম। গরমের সময় গরম আর শীতের সময় শীত। কষ্ট করে থাকতে হতো। জমি কিনে ঘর তৈরি করার স্বপ্ন কখনো দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো দরিদ্রদের থাকার জন্য একটা ভালো ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। এখন সেই পাকা ঘরে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞা জানাই। 

হতদরিদ্র ইকবাল হোসেন বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন। আগে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থাকতাম। সরকার আমার নামে একটা ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। ঘরের মধ্যে রান্না ঘর, গোসল ও টয়লেট আছে। ঘরগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। এখন আল্লাহর রহমতে নিশ্চিতে সেই ঘরে পরিবারসহ বসবাস করছি।

বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনয়নের মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, স্বামী রাজু আহমেদকে নিয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। আমাদের বসবাস করার মতো কোনো জমিজমা নেই। গ্রামে আসলে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকতে হতো। কয়েকদিন থেকে আবারো ঢাকায় পোশাক কারখানায় চলে যেতে হতো। আমাদের দুরাবস্থার কথা ইউএনও স্যারকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর ফাঁকা থাকায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে এখন পাকা ঘরে শান্তিতে থাকতে পারছি। 

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘরগুলো নিঃসন্দেহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা ভারো উদ্যোগ। তবে ঘরের বরাদ্দ আর একটু বাড়ানো হলে ভালো হতো। বাড়ির ডিজাইন সহ আনুষঙ্গিক কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে ঘরের যে ভীত দেড় ফুট আছে আর একটু বাড়াতে হবে। করোনাভাইরাসে লাগাতার লকডাউনে সরঞ্জামের দাম বেশি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হয়েছে। 

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘরগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভ‚মিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলো পাকা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে খুশি। করোনাভাইরাসে লকডাউনের কারণে দ্রব্যমূল্যের বাজারদর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।