• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ভুট্টো তখনও বলছেন, ‘সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে’

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩  

১৯৭১ সালের ২১ মার্চ সকালে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হন। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন বিকালে সদলবলে করাচি থেকে আলাপের জন্য ঢাকায় আসেন। একের পর এক বৈঠকে সমাধান না পাওয়া গেলেও তখনও ভুট্টো বলছেন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিনে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত রাজধানী ঢাকা।

১৯৭১ সালের ২২ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ২১ মার্চের ঘটনা নিয়ে প্রধান খবরের শিরোনাম করা হয়— ‘ইয়াহিয়া-মুজিব অনির্ধারিত বৈঠক’। এতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ২১ মার্চ সকালে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে এক অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। প্রথম কলামে ছাপা হয়, জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান, ‘আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে’।

কী হয়েছিল ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠকে? সকালে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে তাঁর নিজ বাসভবনে বিশিষ্ট আইনজীবী এ.কে.ব্রোহির সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকের সময় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বিকালে সদলবলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দু’পাশের পথচারীরা ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দেয়।

ওই দিনই হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি সাংবাদিকদের আর কোনও সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে ওঠেন। সাংবাদিকরা তার সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেন।

এদিকে ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারিকৃত কারফিউ দুপুর ১২টায় পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবত করা হয়। ঠিক বিকালে চট্টগ্রামে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, ‘আলোচনায় ফল হবে না। এদেশের হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।’

বরাবরের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন  ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক নারী সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

তখন অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিনে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিলে কেবল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান।