• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জানা যায়নি কলেজশিক্ষিকার মৃত্যুরহস্য, জামিন পেয়েছেন মামুন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২২  

নাটোরে কলেজশিক্ষিকা খায়রুন নাহারের (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার তার স্বামী মামুন হোসাইন (২২) জামিন পেয়েছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। বিষয়টি এতদিন গোপন ছিল। মামুনের জামিন পাওয়ার তথ্য শনিবার (১৫ অক্টোবর) জানা গেছে। তবে খায়রুন নাহারের মৃত্যুর রহস্য এখনও জানা যায়নি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন জানান, গত ১৪ আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক খায়রুন নাহারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর খায়রুনের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। এই মামলায় মামুনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ১৫ আগস্ট জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন সদর আমলি আদালতের বিচারক নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলজার রহমান। ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানির দিনে জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মামলা শুনানির জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।

এই আইনজীবী বলেন, ‌‘মামুন আমাকে জানিয়েছেন, তাদের বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ হলে কলেজের সহকর্মী, স্টাফ ও পরিচিত-পরিজনদের কটাক্ষের শিকার হতে থাকেন খায়রুন। এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনা পরিষদ তাকে বহিষ্কার করতে পারে—এমন খবর শোনার পর আরও চিন্তিত হয়ে পড়েন। মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতেন খায়রুন। এছাড়া এক বন্ধুকে ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এসব কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ওই রাতে (১৩ আগস্ট) বেশি ঘুমের ওষুধ খান। এরপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা মামুনের।’

মামুনকে বিয়ে করায় খায়রুনকে কটাক্ষ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাঈদ। তিনি বলেছেন, ‘ওই সময়ে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিয়ের বিষয়টি খায়রুনের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের আলোচনা বা সিদ্ধান্ত কখনোই হয়নি। এছাড়া বিয়ের বিষয় নিয়ে কলেজের কোনও শিক্ষক বা অন্য কেউ তাকে কটাক্ষ করেছে এমন খবরও আমার জানা নেই।’

মামলার বাদী সাবের উদ্দীন বলেন, ‘খায়রুন তার কোনও বন্ধুকে টাকা দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সোনালী ব্যাংকের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় শাখার ম্যানেজার আমাকে বলেছিলেন, মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে ওই ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খায়রুন। ওই সময় মামুন তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক থেকে তিন লাখ ছাড়াও একটি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা তুলে মামুনকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে তার বাড়িতে টিনশেড দুটি রুম করেন মামুন এবং আসবাবপত্র, ফ্রিজসহ কিছু জিনিসপত্র কেনেন। মৃত্যুর ১৮ দিন আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেন খায়রুন। এছাড়া ধান কিনে ব্যবসা করবেন বলে খায়রুনের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মামুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর রাতে ছেলে বৃন্তকে খায়রুন বলেছিলেন, তিনি আটটি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। একটি খেলেই মানুষ বিভোরে ঘুমায়। তাহলে আটটি খাওয়ার পর একজন মানুষ কীভাবে গলায় ফাঁস নিতে পারেন?’

সাবের উদ্দীন বলেন, ‘মামুন ওই রাতে (১৩ আগস্ট) কখন বাইরে গিয়ে কখন ফিরেছেন, তা এখন প্রমাণিত। খায়রুনকে সে-ই হত্যা করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তাকে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

এদিকে জামিনের বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলবো’ বলে কল কেটে দেন মামুন। এরপর কয়েকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

অপমৃত্যু (ইউডি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জানান, লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কলেজছাত্র মামুন ও শিক্ষিকা খায়রুনের বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি ৩১ জুলাই জানাজানি হলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১৪ দিন পর ১৪ আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খায়রুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়। পরে খায়রুনের চাচাতো ভাইয়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।