• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা মুন্নির

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২১  

কারিশমা আক্তার। এসএসসি পাসের পর চাকরি খুঁজছিলেন। অনলাইনে ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে সিভি পাঠান। দুদিন পরই তাকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করা হয়। বলা হয়, আপনি প্রাথমিকভাবে আমাদের কল সেন্টারে চাকরির জন্য সিলেক্টেড হয়েছেন। এরপর ইন্টারভিউয়ের জন্য তাকে ডাকা হয়। সেখানে গেলে ফরম পূরণ (আবেদনপত্র) বাবদ প্রথমে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়।

এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও সাড়ে তিন হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার পর তিনি আর চাকরি পাননি। কারিশমা ততক্ষণে বুঝে যান, তিনি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। কারিশমার মতো আরও অনেকে এভাবে চাকরির নামে প্রতারিত হয়ে র‌্যাবে অভিযোগ করেন।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির (‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি.’) কথিত হেড অব ব্র্যাঞ্চ সালমা আক্তার মুন্নিকে (২১) গ্রেফতার করে র‌্যাব। অফিস থেকে একটি কম্পিউটার, দুটি মোবাইল, ভুয়া নিয়োগপত্র, ২০টি ভিজিটিং কার্ড, আটপাতা বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশটের কপি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের দাবি, ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এক হাজার ২৫০ জনের মতো চাকরিপ্রত্যাশী প্রতারিত হয়েছেন। এই চক্র হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থ।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। তারা আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করছিলেন। এমন ঘটনায় অনেকে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেন। এরপরই র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরপরই খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’র অফিসে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নি জানান, তিনি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘বিডি জবস বিডি’ নামে তার একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। তারা সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, অনলাইনে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে কেউ সিভি পাঠালে অফিস থেকে চাকরিপ্রার্থীদের মোবাইল ফোনে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে যেতে বলা হতো। এরপর কথিত ইন্টারভিউ নিয়ে অফিসের ফরম বাবদ ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এরপর চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে যোগদানের আগে পাঁচ থেকে হাজার টাকা জামানত নেওয়া হতো। এছাড়া পদ অনুযায়ী মাসিক বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো।

পরে সেখানে যোগ দিলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো, প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে। নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতেই তাদের বেতন দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করতেন। এসময় ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয় বুঝতে পারলে জামানতের টাকা ফেরত চাইলেও তা আর দেওয়া হতো না। এভাবে গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক হাজার ২৫০ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানি চললেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে নিয়োগ করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব জানিয়েছে, অভিযুক্ত সালমা আক্তার মুন্নির বাড়ি মাদারীপুরে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের এই তরুণির রয়েছে উচ্চাভিলাসী মনোভাব। এইচএসসি পাসের পর ২০২০ সালে হাবিবুর রহমান নামে এক প্রতারকের মাধ্যমে ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ চালু করেন। চাকরিপ্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করেই মূলত তার প্রতারণা চলছিল।

পলাতক হাবিবুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার মুন্নির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি কিন্তু এখনো তাকে পাওয়া যায়নি। আশা করছি, শিগগির তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সব মহলের সচেতনতা জরুরি। গণমাধ্যমে বিষয়গুলো ফলাও করে প্রচার হলে সচেতন হবে। এছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের নির্ধারিত সংস্থাগুলো কাজ করবে।