• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বিদেশি জাহাজ, অন্যের জমি নিজের দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

বিদেশি জাহাজ, অন্যের জমি নিজের দেখিয়ে বিক্রির নাম করে লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।

রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ আজাদ কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন একটি বাসা থেকে ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মেজবাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার কাটিরহাট গ্রামের আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ১১টি মামলায় সাজা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, শতকোটি টাকার পুরোনো একটি জাহাজকে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুণ্ডের কুমিরা সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে আনা হয় ২০১৫ সালে। কয়েক মাসের মধ্যে এ রকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারত্বের প্রস্তাব দেন প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ কাজে সহযোগী হিসেবে তিনি আশপাশের ২০-২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে টাকা দিয়ে রাখতেন। যারা তার হয়ে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন তথ্য দিতেন। ভুক্তভোগীরা ব্যবসার বিষয়ে যাচাই করার জন্য যখন লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতেন, তখন তারা ভুক্তভোগীদের বলতেন মেজবাহ স্যার খুবই ভালো মানুষ এবং তার ব্যবসার সবকিছু সঠিক রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যমতে, এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ধাপে ধাপে ভুক্তভোগী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এভাব জানা-অজানা অসংখ্য ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানায় র‌্যাব।

আরও জানানো হয়, গ্রেফতার প্রতারক একটি জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। শুধু চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- এসব অপকর্মে তার পরিবার তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতো।

র‌্যাব জানায়, ধৃত প্রতারক বিভিন্ন সময় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে তার ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন। পরবর্তীসময় তাদের কোম্পানির শেয়ারের লভ্যংশ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করতেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে দেখা যেতো তার চেকের বিপরীতে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।

এভাবে তিনি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইলে সই জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল-দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরই মিথ্যা মামলার ভয় দেখাতেন। অনেক সময় উল্টো মামলা করে নাজেহাল করতেন। মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতেন না।

গ্রেফতারের পর উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা নিজ মুখে স্বীকার করেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র‌্যাবকে আরও জানান, তাকে যেন ভুক্তভোগীরা সহজে খুঁজে না পায় সেজন্য তিনি তার নিজ জেলার স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতেন। এছাড়াও তিনি তার একাধিক মোবাইলে ঘনঘন সিম পরিবর্তন করে ব্যবহার করতেন যাতে তার সঙ্গে কেউ সহজে যোগাযোগ করতে না পারে। বর্তমানে তাকে যাতে চিনতে না পারা যায় সেজন্য হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেছেন।