• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

আইএমএফের ঋণ পাওয়া নিয়ে বিরোধীরা কে কী বলেছিলেন?

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  

বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন তথা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়ার মাত্র ছয় মাসের মাথায় সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এ অনুমোদন দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদান প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

করোনা মহামারি ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ - এ দুই কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল; উন্নত দেশগুলোও ভুগছে চরম মুদ্রাস্ফীতিতে; এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। কথাবার্তা চালাচালির আগেই দেশে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এ ঋণ প্রসঙ্গ।

শুরু থেকেই এ নিয়ে নানা নেতিবাচক কথাবার্তা ও প্রচারণা চালিয়ে আসছে বিরোধীরা। গণঅধিকার পরিষদ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মামার বাড়ি নয়। চাইলেই সরকার ঋণ পাবে এমন নয়। সরকার সেখান থেকে ঋণ পাবে না।  

আইএমএফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর আগেই গত ৮ আগস্ট এ কথা বলেছিলেন ড. রেজা কিবরিয়া। বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে যাচ্ছে - এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে আরও আড়াই বছরের মতো লাগবে।

‘কিন্তু আইএমএফ-কে এ সময়ে ডাকা অশনি সংকেত বলে মনে হচ্ছে। দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার দিকে; নয়তো আইএমএফকে ডাকতো না। আমরা বিরাট একটি অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। তেল-গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সরকার দিশেহারা হয়ে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে।’

কিন্তু ড. রেজা কিবরিয়ার এসব বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। চিঠি দেয়ার সাড়ে ৩ মাসের মাথায় দুই দফা আলোচনার মধ্যেই ঋণ দিতে রাজি হয় আইএমএফ।

শুধু ড. রেজা কিবরিয়াই নয়, বিরোধী দল বিএনপির নেতারাও এর বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে শুরু করেন। আইএমএফ ঋণ দিতে রাজি হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার আশ্বাসে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন; এ ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে? এ ঋণ তো জনগণের কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবে।’

গত ১০ নভেম্বর এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে রিজার্ভ ফাঁকা করে এখন আইএমএফ-এর ঋণ নিয়ে সরকার জনগণকে আবারও ঋণের মধ্যে ফেলছে। এর আগে বলেছিলেন আইএমএফের ঋণ লাগবে না, এখন কেন সরকার আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে? কারণ, দুর্নীতি করে রিজার্ভ ফাঁকা করে ফেলেছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ঋণ নিয়ে সরকার দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। ঋণের ভারে জর্জরিত করে আজকে দেশকে দেউলিয়াত্বের পথে নিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আইএমএফের ঋণের কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন বাম রজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাম গণতান্ত্রিক জোট। নেতারা বলেন, এ ঋণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।

গত ৩ নভেম্বর কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে জোটের এক সভায় আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে নেতারা বলেন, ‘বাংলাদেশের আজকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসন। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা নয়ছয় করেছে সরকার। দুর্নীতি লুটপাটের টাকা পাচার হয়েছে সরকারি মদদে। সেই টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেই; দোষীদের গ্রেফতারেরও কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই।’

তবে বিরোধীদের এসব সমালোচনা শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। বাংলাদেশের দেয়া ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাবটিই অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এক কথাতেই বিরোধীদের সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ১৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিশোধের ক্ষমতা আছে বলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ কেবল তখনই (যে কোনো দেশকে) ঋণ দেয় যখন দেশটি ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। আমরাতো তেমন কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ (আইএমএফ থেকে) নিচ্ছি না।’

ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, আইএমএফ হয়তো বা এ ঋণ দেবে না। তারা ভেবেছিল আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’

ঋণ অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ ও মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এই ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা এই ঋণ প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের প্রতিও রইল আমার কৃতজ্ঞতা।'

বার্তা সংস্থা ইউএনবির তথ্য অনুযায়ী, রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি দল ঋণ কর্মসূচির বিশদ বিবরণ বের করতে গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ঢাকা সফর করেন। এরপর ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের ডিএমডি আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে ঋণ পাচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য মোট ৪.৫ বিলিয়ন (সাড়ে চারশ কোটি) ডলার ঋণ দেয়া হবে।'