• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

সাবরিনার একাধিক জন্মতারিখ, এনআইডি, পাসপোর্ট!

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  

করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনার জন্মতারিখ তিনটি; আর এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ও পাসপোর্ট আছে দুটি করে। সম্প্রতি এ কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো. হারুন অর রশীদ।

ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা যেটা দেখেছি, তার এনআইডি কার্ডে যে জন্মতারিখ আছে, সে অনুসারে ৭ বছরে তিনি এসএসসি পাস এবং ১৭ বছরে এমবিএস পাস করেছেন। আমরা তদন্ত করে যেটা বুঝতে পারলাম, এই যে নির্বাচন কমিশন তাকে এনআইডি কার্ডটা দিলেন, তারা তো কোনো কিছুই যাচাই-বাছাই করে দেখলেন না। সাবরিনা বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করেছেন। আর আইডি কার্ড ব্যবহার করে কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন। তার জন্মতারিখ তিনটি, সন বদলে এনআইডি করেছেন দুটি এবং পাসপোর্টও দুটি।’

এরই মধ্যে করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির মামলায় ১১ বছরের দণ্ডও হয়েছে তার। সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনার জন্মতারিখ তিনটি! জালিয়াতি করে বানানো দ্বিতীয় জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্মসাল ১৯৮৩, প্রথম এনআইডিতে ১৯৭৮, আর মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটে ১৯৭৬। দ্বিতীয় এনআইডি অনুযায়ী তিনি এসএসসি পাস করেছেন ৭ বছর বয়সে, আর এমবিবিএস পাস করেছেন মাত্র সতেরো বছরে। আদালতে দেয়া গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ডিবির তদন্ত প্রতিবেদনের আরও উঠে এসেছে,  সাবরিনা ২০০৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র পান। এতে তার নাম সাবরিনা শারমিন হোসেন। পিতার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন, মায়ের নাম কিশোয়ার জেসমিন। জন্মতারিখ ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর।

সাববিনার দ্বিতীয় এনআইডির তথ্য অনুযায়ী নাম সাবরিনা শারমিন হুসেন। হোসেন বদলে হুসেন শুধু নিজের নামের বেলায় নয়, বাবার নামেও জুড়ে দিয়েছেন। আর মায়ের নাম থেকে কিশোয়ার বাদ দিয়ে এখানেও যুক্ত করেছেন হুসেন। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি করেছেন জন্মতারিখে। ২ ডিসেম্বর ঠিক থাকলেও সাল ১৯৮৩ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সাবরিনার জন্ম মূলত ১৯৭৬ সালের ২ ডিসেম্বর। অথচ প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রে ১৯৭৮, আর দ্বিতীয়টিতে ১৯৮৩ সাল। আদালতে দেয়া অভিযোগপত্র অনুসারে ১৯৯১ সালে মাধ্যমিক এবং ২০০০ সালে এমবিবিএস পাস করেছেন তিনি। অর্থাৎ ৭ বছরে এসএসসি, আর ১৭ বছরে ডাক্তারি পাস করেছেন তিনি।

এ নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ জোন) মশিউর রহমান বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তৈরি করা এনআইডি ব্যবহার করে সাবরিনা চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন সাত বছর।

মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘সাবরিনার  দুটি টিন বানিয়ে অনেক কর ফাঁকি দেয়ার কাজও করে থাকতে পারেন, ভিন্ন ভিন্ন জন্ম তারিখ নিয়ে দুটি এনআইডি বানিয়ে দুটি পাসপোর্ট তৈরি করেছেন, যা দিয়ে বৈধ বা অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে থাকতে পারেন। তার মানে তার কাগজপত্রে ভুলে ভরা তথ্য ছিল। কর্তৃপক্ষ ভালো দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করলে এটি ধরা পড়ত বা সমাধান করা যেত। আমরা তাকে প্রশ্ন করেছিলাম কেন সে এই দুই নাম্বারি কাজগুলো করেছেন। তিনি একজন মেধাবী চিকিৎসক, তার ভেতরে ছেলেমানুষী ছিল; তিনি টিকটক, নাটক ও হাঙ্কিপাঙ্কি করতেন। তিনি বয়সি মানুষ হলেও থাকতেন চিরযুবার বেশে, ফ্যাশনেবল; এ জন্য তিনি বয়সে তরুণী থাকতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি শারীরিকভাবে তরুণী থাকতে চেয়েও তার সনদপত্রগুলো বদলিয়ে ব্যাক্লমেইলিং করেছেন। তার সনদ অনুসারে ২০৪২ সালে তিনি অবসরে যাবেন; এর মধ্যে অনেক বড় পদ হাতিয়ে নেয়ার ইচ্ছা তার ছিল।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দেয়ার অভিযোগে জেকেজির চেয়ারম্যান ও বরখাস্তকৃত চিকিৎসক  সাবরিনা  এবং তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীকে ২০২০ সালের ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয়।