• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কুশিয়ারা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় ২৫ লাখ মানুষ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২২  

কুশিয়ারার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নের রানীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সেতুটির নির্মাণকাজ। সেতুটিকে নিয়ে এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষায় আছেন সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষ।

এ প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হবে আগামী ২৯ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতুর উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ও অন্যতম সেতু হলো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে জাঁকজমক করতে নেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি।

আগামী ২৯ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু। আড়াই কিলোমিটারের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। এ সেতু দিয়ে যানচলাচল করলে রাজধানীর সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ২ ঘণ্টা কমবে। এতে দুর্ভোগ কমবে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের মানুষের যোগাযোগের সময় কমিয়ে আনার জন্য শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডাবর পয়েন্ট হতে জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করেন। কিন্তু মহাসড়ক নির্মাণ করলেও ওই সময়ে কুশিয়ারা নদীর উপর রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণ ও ফেরি কার্যক্রম শুরু সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় গেলে থমকে যায়, এসব উন্নয়ন কাজ।বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যু হলে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

এমএ মান্নান সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত নেতা আবদুস সামাদ আজাদের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন। জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ তথা সুনামগঞ্জের মানুষকে আশার আলো দেখাতে থাকেন। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সেতুটির দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার হলেও মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০২.৩২ মিটার ও প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোলপ্লাজা, কালভার্ট ও স্থানীয় ইটাখলা নদীর উপর আরেকটি ছোট সেতু নির্মাণে।

শুধু তাই নয় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে আরও ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবর-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজসহ ২২ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ হয় এবং ডাবর থেকে জগন্নাথপুর অংশে পুরাতন ৮টি সেতু ভেঙে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ৮টি সেতু নির্মাণ করা হয়। একই সঙ্গে ছাতক উপজেলার আরও ৯টি সেতুর কাজ এরই মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী ২৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জে মোট ১৭টি সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা জানায়, এই সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কমে আসবে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ অর্থনীতিক দিক দিয়েও আরও চাঙা হবে।

জগন্নাথপুরের বাসিন্দা রনি মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ জেলাবাসীকে সিলেট হয়ে রাজধানীতে যেতে হতো। এখন সেই যন্ত্রণা কমবে। শুধুমাত্র ৫২ কিলোমিটার দূরত্ব কমা নয়, যানজট ঠেলে রাজধানীতে যেতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগতো। এই ভোগান্তিও শেষ হবে ২৯ অক্টোবর।

জগন্নাথপুরের বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের পর সুনামগঞ্জের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে। মানুষ কম সময়ে ঢাকা যেতে পারবে। পাশাপাশি এই এলাকায় উৎপাদন হওয়া ধান, সবজিসহ বিভিন্ন কিছু ঢাকায় কম সময়ে পাঠানো যাবে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং জানান, আগামী ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতুসহ সুনামগঞ্জে মোট ১৭ টি সেতুর উদ্বোধন করবেন। রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু উদ্বোধনের পর সুনামগঞ্জ অর্থনীতিক দিক দিয়ে আরও চাঙা হবে।