• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

শীতপ্রবণ তেঁতুলিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে বদলে যাওয়া জীবনের গল্প

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  

দেশের সবচেয়ে উত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। গত ৩০ বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এই উপজেলাতেই। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পারদ নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। হিমালয় কন্যা খ্যাত এই উপজেলা দেশের অন্যতম শীতপ্রবণ এলাকা। এর ঠিক কয়েক কিলোমিটার উত্তরেই ভারতীয় ভূখণ্ডের পর্বতমালায় শীতকালে রীতিমতো বরফ পড়ে। যার প্রভাবে ওই এলাকার মানুষকে হাড় কাঁপানো শীতে কষ্ট পেতে হয়। সবচেয়ে বিপাকে পড়েন গৃহহীন ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আপদের ওপর বিপদ হয়ে দেখা দেয় শীত। তবে সম্প্রতি চিরচেনা এই জীবনের গল্পটা বদলে গেছে মুজিববর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া মানুষদের।

এই এলাকায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে বদলে যাওয়া জীবনের গল্পই শোনা গেলো। দুই শতক জমি আর একটি আধাপাকা ঘর পাওয়া উপকারভোগীদের এখন শীতকালেও দেখা যায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে।

দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা এসব পরিবার জানিয়েছে, ভূমিহীন হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহহীন হয়ে যাযাবরের জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের। বাসস্টেশন, রেল স্টেশন কিংবা সরকারি খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করেছেন। শীতের সময় হিমেল বাতাস ঢুকতো ঘরে, খুব কষ্ট পেতে হতো। সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হতো পরিবারের শিশুদের। শীতকালে তাদের সবসময় ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি লেগেই থাকতো।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই বাসিন্দারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া জমি আর ঘর পাওয়ায় শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে দুই থেকে তিনটি করে কম্বলও দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ এখন অনেক কমে গেছে। সবমিলিয়ে শীতের আগের সেই কষ্ট আর নেই, বেশ ভালো আছেন তারা।

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া (মনিকু) এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে বসবাস করছেন মো. ইলিয়াস (৫২) ও তার পরিবার। তিনি বলেন, ‘ভূমিহীন হওয়ায় আমরা আগে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতাম। শীতের সময়, বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে ঘরের মধ্যেও টেকা যেতো না। চারদিক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতো ঘরে। পুরো ঠান্ডার সময়টায় সন্তানদের জ্বর-সর্দি-কাশি লেগেই থাকতো।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পে আওতায় মনিকুতে ৩৭টি ভূমিহীন পরিবার দুই দশমিক দুই দশমিক জমি এবং একটি কংক্রিটের তৈরি ঘর পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ইলিয়াসের পরিবারও রয়েছে। এখন আর পাকা ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে পারছে না, পেয়েছেন কম্বলও। প্রতিটি ঘরে দুইটি রুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা থাকায় সবাই স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারছেন। আশ্রয়হীনদের জন্য স্থায়ী এই বন্দবস্ত করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুললেন না এই ব্যক্তি।

এই উপজেলার সদর উপজেলার মহন পাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে বসবাস করছেন ষাট বছর বয়সী দুদু মিয়া। তিনি বলেন, ‘শীতকালে ভোগান্তির শেষ ছিল না। বাচ্চাদের জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে না পেরে কখনও কাঁদতাম। ঠান্ডার কারণে অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকতো এই সময়ে। কী যে কষ্ট করেছি, তার কথা আর কি বলবো...। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘরে, তার দেওয়া কম্বলের কারণে এখন আমরা সুখে-শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। একটা স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। তার জন্য দোয়া করি।’

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ তিনি বলেন, হিমালয় পর্বতমালা থেকে ছুটে আসা হিমেল বায়ুর একটি অংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাই শীতকালে ভারতীয় ভূখণ্ডের অতি শীতল বাতাস ধীরে ধীরে কমতে কমতে এদেশেও প্রভাব ফেলে। সে কারণে শীতের সময় এই হাওয়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কাঁপন ধরায়।

২০২২ সালের ২১ জুলাই পঞ্চগড় জেলাকে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই স্মৃতিচারণ করে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতের মৌসুমে দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়া প্রায়ই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ে খবরের শিরোনাম হয়। গৃহহীন দরিদ্র, অসহায় ও আশ্রয়হীন মানুষজন বাসস্টেশন, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন আনা-কানাচে খুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করতো। এই সময় তাদের কষ্টের শেষ ছিল না। এসব মানুষকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কল্যাণে প্রতিটি পরিবারকে দুই-তিনটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের আর শীতের কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা; সকলেই ঠান্ডাজনিত রোগের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে গড় তাপমাত্রা রাতের বেলা ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় এবং ঘন কুয়াশার কারণে তা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হতে পারে।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারের কাছে জমি ও ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় মোট ৪ হাজার ৮৫০টি পরিবার রয়েছে। আমরা তাদের সবাইকে ১৭৬ স্পটে আশ্রয় দিয়েছি।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, ১৯৯৭ সাল থেকে প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে মোট ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ হাজার ৮৬৬টি পরিবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ এবং কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা।