• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

মানুষের শরীরে ছাগলের অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপন, এমন নজির একটিই

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২১  

রোগীর শরীরে ছাগলের অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপনের নজির এই পৃথিবীতে একটাই আছে! তাও প্রায় ৯০ বছর আগের ঘটনা। ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে এই বিশাল কাণ্ডটি ঘটিয়ে ফেলেন জন ব্রিঙ্কলে।

সেদিনের ঘটনা বলা যাক। খুব সকাল; যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস রাজ্যের মিলফোর্ডের পথে রওনা দেয় স্টেট মেডিক্যাল বোর্ডের একটি দল ছুটছে। সঙ্গে অসংখ্য সাংবাদিকও রয়েছেন। জন ব্রিঙ্কলের চেম্বারেই যাবেন তারা।

কানসাস স্টেট মেডিক্যাল বোর্ডের দলটি সেখানে গিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকলেন জন ব্রিঙ্কলেকে। কিন্তু জন ব্রিঙ্কলে বললেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে পুরো কর্মযজ্ঞ দেখতে! মেডিক্যাল বোর্ডের দলটি ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলেন। এদিকে জন ব্রিঙ্কলে পুস্তুত!

প্রথমে জন ব্রিঙ্কলে জীবন্ত ছাগলের দুটি অণ্ডকোষ কেটে বের করে আনলেন খুবই বুক ফুলিয়ে। এ কাজে তিনি সফল হলেন! ওই চিকিৎসক এবার পাশের টেবিলে শুয়ে থাকা রোগীর শরীরে খুব সন্তর্পনে সেগুলো প্রতিস্থাপন করলেন। এই অস্ত্রোপচার নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু এই একটি অস্ত্রোপচারই সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছিল তাকে। ‘গোট গ্ল্যান্ড ডাক্তার’ হিসাবে এক নামে সকলে চেনেন তাকে।

 ১৮৮৫ সালে উত্তর ক্যারোলিনাতে জন ব্রিঙ্কলের জন্ম। তার বাবাও এক জন হাতুড়ে চিকিৎসক ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ছোটখাটো কাজে ঢুকেছিলেন তিনি। কিন্তু বরাবরই বাবার মতো চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন।

জন ব্রিঙ্কলে। ছবি: সংগৃহীত

ইচ্ছে যখন ছিল বাবার মতো চিকিৎসক হওয়া, তাই ঘরের মানুষটাকেই গুরু মানলেন। বাবার ওষুধের বই পড়ে চিকিৎসা নিয়ে বেশ কিছু জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তার পর আর তাকে ঠেকায় কে! শহরের অলিতে গলিতে ওষুধ বেচার একটি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

১৯০৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে শিকাগোয় চলে যান তিনি। সেখানে বেনেট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই ব্রিঙ্কলে মানব শরীর সম্পর্কে বিবিধ জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু তিন বছর পর বেতন না দেওয়ায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে তার কাছে কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। তবে তিনি নিজের জন্য একটি নকল সার্টিফিকেট জোগাড় করেন।

জন ব্রিঙ্কলে এরপর পাড়ি দিলেন গ্রিনভিলেতে। মানুষকে বোকা বানিয়ে পুরুষাঙ্গ শক্তিশালী করার কথা বলে বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করতেন তারা। কিন্তু কয়েক মাস এভাবে চলার পর তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। ব্যবসা গুটিয়ে দু’জনেই সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

এরপরই জন ব্রিঙ্কলের কানসাস পর্ব শুরু! ওষুধ বিক্রির জন্য নকল সার্টিফিকের কাজে লাগিয়ে কানসাসের সেনা রিজার্ভ মেডিক্যাল বিভাগের চিকিৎসক হিসাবে কাজ পেয়ে যান। আর সেই বেতনে স্নাতক হন তিনি। এরপর বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তখনই নাকি তিনি জেনেছিলেন সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাণী ছাগল।

একাধিক বার কানসাসের গভর্নর হওয়ার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন জন ব্রিঙ্কলে। ছবি: সংগৃহীত

১৯১৭ সালে কানসাসে নিজেই একটি ক্লিনিক খুলে ফেলেন তিনি। এর পরের বছরই যৌন দুর্বলতার সমস্যা নিয়ে বিল স্টিটসওয়ার্থ নামে এক ব্যক্তি তার ক্লিনিকে এসেছিলেন। ব্রিঙ্কলে নেহাত মজা করেই তাকে বলেছিলেন, ছাগলের এক জোড়া অণ্ডকোষেই তার মুক্তি লুকিয়ে রয়েছে।

এরপরই শুরু হয় বিল স্টিটসওয়ার্থের পাগলামো। ব্রিঙ্কলের পিছনে পড়ে যান ছাগলের অণ্ডকোষ নিজের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য! একপ্রকার নাছোড়বান্দা হয়ে পড়েছিলেন। তার জোরাজুরিতেই এ রকম একটা অস্ত্রোপচার করতে সম্মত হয়েছিলেন ব্রিঙ্কলে।

তবে এর ভিন্ন মতও রয়েছে। বিলের পরিবারের দাবি, ব্রিঙ্কলেই নিজের টাকার বিনিময়ে বিলকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে রাজি করিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার সফল হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন বিল। তার পর ঝড়ের গতিতে ব্রিঙ্কলের কথা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল।

ব্রিঙ্কলের ক্লিনিকের বাইরে রোগীদের লাইন পড়ে যেতে শুরু করে। প্রচুর উপার্জন করেন তিনি। তার কাছে প্রতিনিয়ত ছাগল সরবরাহ করতেন এক ব্যক্তি। এক মহিলার দেহে ছাগলের ডিম্বাশয়ও প্রতিস্থাপন করেছিলেন।

খুব বেশি দিন এ ভাবে কাটাতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে অস্ত্রোপচার সফল মনে হলেও তাঁ রোগীরা ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন। কারও সঙ্গী হল ভয়ঙ্কর সংক্রমণ, কারও মৃত্যু ঘটল। ১৯৩০ সালে চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয় তার। এর ছ’মাস পর রেডিয়ো লাইসেন্সও বাতিল হয়ে যায়।

জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে ফের ধুলোয় মিশে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি ব্রিঙ্কলে। তিন বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। ক্রমে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। ১৯৪২ সালের ২৬ মে সান অন্টোনিয়োতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয় ব্রিঙ্কলের।