• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

অপহরণের ৩০ বছর পর ছবি এঁকে পরিবারকে খুঁজে পেলেন তিনি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২২  

ঘটনার শুরু ১৯৮৮ সালে। মাত্র চার বছর বয়সে অপহরণের শিকার হন চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইয়ুনান প্রদেশের নাগরিক লি জিংওয়ে। পরিবারের পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তিই তাকে অপহরণ করে শিশুপাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়।

অপহরন হওয়ার পর হেনান প্রদেশের মধ্যাঞ্চলীয় একটি এলাকায় এক পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন লি। তবে তার মন পড়ে থাকত ফেলে আসা নিজের গ্রামে।

সেই স্মৃতি হাতড়ে ৩০ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন প্রচার এবং নিজের স্মৃতি থেকে আঁকা খসড়া মানচিত্রের বদৌলতে সম্প্রতি নিজের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হয়েছেন লি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বয়সে ছোট থাকলেও অপহরণের সময় লি বুঝতে পেরেছিলেন তাকে পরিবার থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় হওয়ার পরও নিজ গ্রামে ফেরার কোনো উপায় ছিল না তার। কারণ, জন্মের সময় দেওয়া নাম, নিজের মা-বাবার নাম, গ্রামের নাম—কিছুই মনে করতে পারছিলেন না তিনি।

তবে গ্রামের বাড়ি দেখতে কেমন ছিল, তা মনে করতে পারতেন তিনি। সেখানে গাছপালা ছিল, গরু চরত, আঁকাবাঁকা রাস্তা ছিল, বহমান নদী ছিল। তার মনে আছে, বাড়ির পাশে ধানখেত ও পুকুর ছিল। পাশের পাহাড়েই জন্মাত বাঁশকোরল। ছোটবেলায় যখনই নিজের বাড়ির কথা মনে পড়ত, তখনই তিনি তার গ্রামের ছবি আঁকতেন। দিনে অন্তত একবার হলেও ছবি আঁকতেন তিনি।

tgterew

আঁকা সেই ছবি

চীনে শিশু অপহরণের ঘটনা দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চীনে চালু থাকা এক সন্তান নীতির কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ নীতির আওতায় চীনে একাধিক সন্তান জন্ম দিলে ওই দম্পতিকে বিপুল জরিমানা গুনতে হয়। দ্বিতীয় সন্তান ধারণ করলে গর্ভপাতে বাধ্য হতেন তারা। তবে এখন সে নীতি শিথিল করা হয়েছে দেশটিতে।

কীভাবে লি তার পরিবারকে খুজে পেলেন তার বর্ণনায় দ্যা গার্ডিয়ান জানায়, চীনা ভিডিও প্ল্যাটফর্ম দয়িনে লির বক্তব্যের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে লি বলেন, ‘অনেক বছর কেটে গেছে। আমি জানি না পরিবারের কেউ আমাকে খুঁজছে কি না।’ ওই ভিডিওতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রবল ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন লি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার আঁকা ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়। পরে তা জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শৈশবে অপহৃত হওয়া মানুষকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে এ মন্ত্রণালয় তদন্তের কাজ শুরু করে। দ্রুতই কর্তৃপক্ষ ইয়ুনান প্রদেশের ঝাওতংয়ে লির সম্ভাব্য জন্মদাত্রী মাকে চিহ্নিত করে। তাদের সম্পর্ক নিশ্চিত হতে দুজনের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় তাদের ডিএনএ মিলে গেছে।

ডিএনএ মিলে যাওয়ার পরই লি তার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাকে চিনতে পারেন তিনি। লি বলেন, ‘আমার মা আর আমার ঠোঁটগুলো একই রকমের। এমনকি আমাদের দাঁতও একই রকমের।’

সেই ভিডিও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, লি তার মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছেন এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। তখন লির পরিবারের অন্য সদস্য ও সমর্থকদের সেখানে দেখা গেছে। তার মা বলেন, ‘অবশেষে আমি আমার সন্তানকে খুঁজে পেয়েছি।’