• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

আল্ট্রাসাউন্ডে ‘জমজ সন্তান’, প্রসব একটির

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২২  

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রজনী খাতুন নামে এক নারীর অস্ত্রপাচারের পর একটি নবজাতক চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের দাবি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে জানানো হয় গর্ভে দুটি সন্তানের কথা। সিজারের পর মিলল একটি সন্তান। রোববার (১৭) সকালে সাড়ে ১১টার দিকে সিজার করার পর একটি সন্তান জন্ম নিয়েছে। আরেকটির কোনো হদিস নেই। এই নিয়ে তোলপার রজনির পরিবার।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অফিস থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যলয় পর্যন্তও রজনীর পরিবার। এই দুই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট ভুল? নাকি বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটেছে? এ নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রজনী খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের মসজিদপাড়ার রাসেল আলীর স্ত্রী।

জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় মা নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি করা রজনী খাতুন। সেখান থাকা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) নাজমুল সাক্ষরিত প্রিন্ট রিপোর্টে জানানো হয় গর্ভে দুটি সন্তান রয়েছে। গত ৩১ মার্চ আবারো ওই প্রতিষ্ঠান থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। সেদিন ডা. আফরোজ শারমি একই রিপোর্ট দেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে ভুল ছিল। দুটি নয় প্রসূতির গর্ভে বাচ্চা পাওয়া গেছে একটি। হাসপাতালের রিপোর্টে গর্ভে একটি বাচ্চার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল এবং সম্ভাব্য আরেকটি বাচ্চাও থাকতে পারে এমনটি জানানো হয়েছিল।

রজনী খাতুনের বাবা নবীর হোসেন বলেন, প্রসব বেদনা উঠলে গতকাল শনিবার সকালের দিকে আমার মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতাল থেকে রজনীকে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হলে গর্ভে যমজ দুটি সন্তান কথা বলে।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সরকারি হাসপাতাল থেকে গর্ভে দুটি সন্তানের কথা জানালেও চিকিৎসক একটি সন্তান আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাহলে আরেকটি সন্তান কি হলো? নিশ্চয়ই চুরি হয়েছে গেছে। আমার নাতিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

রজনী খাতুনের স্বামী রাসেল বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানে তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি করে একই রিপোর্ট এসেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভুল হলেও সদর হাসপাতালের রিপোর্ট কিভাবে ভুল হয়?

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুটি রিপোর্ট আমাকে বুঝিয়ে দিলেও সদর হাসপাতালের রিপোর্টটি দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই বোঝা যাচ্ছে আমার বাচ্চাটার সাথে কিছু একটা হয়েছে। আমি এবিষয়ে প্রশাসনের দারস্থ হব।

এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (সেকমো) আলট্রাসনোগ্রাফি করার কোন বৈধতা নেই। এটা সম্পন্ন অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে অপর চিকিৎসক ডা. আফরোজ শাওমির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।

মা নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি করা উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) নাজমুল হক দাবি বলেন, সব জায়গাতেই আমরা আলট্রাসনোগ্রাফি করি। এতে অবৈধ এর কি আছে? মানুষ মাত্রই ভুল করে। এ জন্য আমি দুংখ প্রকাশ করছি। তবে ওই রোগীর রিপোর্ট প্রিন্ট করতে গিয়ে ভুল করতে পারে। এছাড়াও আমারও ভুল হতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আকলিমা খাতুন বলেন, সিজারের পর রজনী খাতুবের গর্ভে একটি ছেলে সন্তান পেয়েছি আমরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বলা হয়েছে দুটি সন্তানের কথা। আর সদর হাসপাতালের রিপোর্টে একটি বাচ্চার কথা সরাসরি বললেও সম্ভাব্য আরেকটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, সদর হাসপাতালে যে চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাফি করেছে তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। সে একটি বাচ্চার কথাই উল্লেখ করেছে এবং শুধু সম্ভাব্য আরেকটি থাকতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে সদর হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি রুমের চিকিৎসক ডা. নুরজাহান খাতুন রুমি বলেন, প্রথমে গর্ভে একটি সন্তানের কথা জানিয়েছিলাম। তারা গর্ভে দুটি বাচ্চার কথা বললেও আপনি একটি কেন বলছেন। পরে আমি আরও ভালো করে পরিক্ষা-নিরিক্ষার করি এবং রোগীদের বারবার বলার কারণে সম্ভাব্য আরও একটি সন্তান গর্ভে থাকতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিস্তারিত জানতে আমি খোজ নিচ্ছি। একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) কখনোই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে পারবেন না। যদি করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।