• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২২  

“মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই। সত্য ন্যায়ের ধর্ম থাকুক মাথার পরে আজি, অন্তরে মা থাকুক মম, ঝরুক স্নেহরাজি।” অসাধারণ অভিব্যক্তিতে মায়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন কবি কাজী কাদের নেওয়াজ। এবার মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা বোঝাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের বেকাসাহরা গ্রামের কৃষক এনামুল হক ফসলের জমিতে ‘মা’ এর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

বেকাসাহরা গ্রামের বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কের পাশে বেগুনি ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধানের চারায় মা শব্দটি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ধানক্ষেতে এই প্রতিচ্ছবি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন।

এনামুল হক বলেন, ‘বেগুনি ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ ধানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরি করেছি। প্রথমে বীজতলার চারার বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ নিই। সুতা টেনে মা শব্দের কাঠামো তৈরি করি। পরে ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধান রোপণ করি। এরপর চার পাশে বেগুনি রঙের ধানের চারা রোপণ করি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধানের চারাগুলো বড় হয়ে ‘মা’ শব্দের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন এই কাজে আমাকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এক ফসলের জন্য প্রায় ৫০ শতক জমি ইজারা নিয়ে এই চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলেছি।’

‘মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা বোঝাতে এটি করেছি’ উল্লেখ করে এনামুল হক বলেন, ছয় বছর আগে আমার বাবা মারা যান। একমাত্র ছেলে হিসেবে ছোটবেলা থেকেই মাকে বেশি ভালোবাসি। মাকে ভালোবাসলে কোনও সন্তান তার কথার অবাধ্য হবে না। সেই ছেলে কখনও খারাপ পথে যাবে না, মাদক নেবে না। মায়ের কথা শুনলে সন্তানের জীবন সুন্দর হবে।

এনামুল হকের মা জোহরা বেগম (৬৫) বলেন, ‘ধানের চারা দিয়ে জমিতে লেখা মা শব্দের প্রতিচ্ছবি যখন মানুষ দেখতে আসে তখন খুব খুশি লাগে। প্রতিদিন মানুষের দেখতে আসার কথা শুনেই বিষয়টি জেনেছি। এর আগে ছেলে বিষয়টি জানায়নি। অনেক ভালো একটি কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বয়সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। কাপড় পরানো, গোসলের পর শরীর মুছে দেওয়া, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়াসহ সব কাজে ছেলে সহযোগিতা করে। ছেলের ভালোবাসায় আমি খুশি। সব মায়ের সন্তান আমার ছেলের মতো হোক।’

দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এনামুল হকের ধান গাছের চিত্রকর্ম দেখতে এসেছেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়িতে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনামুল হকের ধানক্ষেতের চিত্রকর্মটি দেখি। মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। আসলেই অসাধারণ।’

টেপিরবাড়ি গ্রামের সেলিম খান বলেন, ‘ধানের চারায় মা লেখাটি দেখতে অনেক সুন্দর। প্রতিদিন শত শত মানুষ দেখতে আসেন।’

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধানের চারার চিত্রকর্মটির মূল পরিকল্পনাকারী কৃষক এনামুল। তিনি শুধু বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা নিয়েছেন। অসম্ভব এক সৃষ্টিকর্মের প্রতিফলন দেখিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন এনামুল।’