• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ভাইরাল প্রীতি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২২  

বর্তমান সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, মানুষ ভাইরাল হওয়া বা বহুল প্রচারিত হওয়া একটা বিষয়ের প্রতি কেমন মারাত্মকভাবে ঝুঁকে পড়ে। এটিকে মারাত্মক বলছি এ কারণে যে, এমন প্রবণতা সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য সব সময় ইতিবাচক হয়ে ওঠে না বরং এসবের ফলে নৈতিকতার বিপর্যয়ই বেশি হতে দেখা যায়, যা অবশ্যই ব্যক্তি তথা সমাজের জন্য নেতিবাচকভাবেই উপস্থাপিত হয়। বস্তুত আমাদের ন্যূনতম বিবেকবোধ, নৈতিকতা কেড়ে নিচ্ছে ভাইরাল প্রীতি!


রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে হেঁটে ফুল বিক্রয় করতে দেখা যায় অনেক পথশিশুকে, এদের বেশির ভাগই ছিন্নমূল বা ভাসমান শিশু। তেমনি এক শিশু ‘ফুলকন্যা’ বলে পরিচিতি পায় সম্প্রতি। সে নিখোঁজ হওয়ার পর শুরু হয় তাকে ঘিরে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া গেছে বটে। এরপর বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন মানুষ তাকে সহায়তা করেছে—তার সঙ্গে ছবি তুলেছে; স্ট্যাটাস, ভিডিও, ছবির শেয়ারের মাধ্যমে তাকে সাহায্যে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে! এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শাহবাগ, পরীবাগ, আগারগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন রাস্তায় আরো যে কত ফুলকন্যা মুকুলেই ঝরে যায়, মরে যায়, পাচার হয়ে যায়, খাবার-চিকিৎসার অভাবে মড়ার মতো বেঁচে থাকে, কে রাখে তাদের খোঁজ! প্রকৃতপক্ষে আমাদের উদ্দেশ্য তো লোকসেবা নয়, লোকদেখানো। অথচ সবাইকে নিয়ে, সবার জন্য কাজ করা আমাদের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমরা কি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছি, সে দায়িত্ব?  

বাস্তবিক অর্থেই আকাশসংস্কৃতির প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম খুবই মারাত্মকভাবে বিপথগামী হচ্ছে। আজকাল বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় গালি, অশ্রাব্য ভাষা ছাড়া নাকি জমেই না। একটা সময় ছিল যখন বন্ধুরা অন্য বন্ধুর সঙ্গে মজা নিলেও, বাবা-মাকে নিয়ে কখনোই বাজে কথা বলত না। কারণ বাবা-মা তো বাবা-মাই, বন্ধুর আত্মীয়স্বজনের প্রতিও ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। আর আজ কী দেখছি আমরা! ইউটিউব মাধ্যমে প্রদর্শিত নির্দিষ্ট কয়েকটি নাটকের বদৌলতে গালির ঝুড়ি, নারীদের অসম্মান করা, নারীদের উদ্দেশ্য করে দ্বৈতার্থক বাজে অঙ্গভঙ্গি, অশালীন কথা, শিক্ষক, বয়স্কদের সঙ্গে মজা নেওয়াসহ নৈতিকতার অবক্ষয়ের কী শেখানো হচ্ছে না বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে? আমাদের চলচ্চিত্র পাড়ার নিয়ন্ত্রকরা, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে এ সমাজের অবক্ষয়ের নীল জালে হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না।

দিনদিন বিষয়টি এমন পর্যায়ে দাঁড়াচ্ছে যে, কিছু ছড়িয়ে পড়লে, ভাইরাল হলে আমাকেও তাই করতে হবে। কিন্তু কেন? আমাদের কি বিবেকবোধ নেই? নৈতিক জ্ঞান নেই? আমাদের কি বোঝা উচিত নয়, কোন কাজ আমাদের জন্য কেমন প্রতিক্রিয়া বয়ে আনতে পারে? কোনটি আমার করা উচিত, কোনটি নয়? আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিভেদে নিজেদের অত্যন্ত জ্ঞানী, অত্যন্ত উন্নত ভেবে থাকি। শুধু মুখের বুলি আর সামাজিক মাধ্যমে বিশাল বিশাল স্ট্যাটাস দিলেই হবে না। সেটি আমাদের আচরণে, আমাদের সচেতনতায় প্রকাশ করতে হবে। আমার কোনো কার্যক্রমের দ্বারা অপর ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই সমস্যার সম্মুখীন না হয়, আমার কোনো কার্যক্রম যেন সাংঘর্ষিক না হয় আমার দেশ, আমার সংস্কৃতির সঙ্গে।