• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

সহপাঠীরা দাদি বলে ডাকে তাকে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২৩  

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ৫১ বছর বয়সী হাসিনা খাতুন। সহপাঠীরা কেউ দাদি আবার কেউ বান্ধবী বলে ডাকে তাকে। অবসর সময়ে তাদেরকে বিভিন্ন গল্পও শুনান তিনি। দুই সন্তানের জননী হাসিনা খাতুন কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী।

হাসিনা খাতুন মনে করেন, যার ভেতরে শিক্ষার কোনো আলো নেই, তিনি অন্ধকারে আছেন। তাই জীবনের প্রায় শেষ বয়সেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসিনা খাতুন সকালে বাড়ির কাজকর্ম সেরে স্কুলে এসেছেন। স্কুলে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে তিনিও বেঞ্চে বসে পড়ছেন। শিক্ষিকা তাকে পড়া ধরলে তিনি ভালোভাবে পড়া দিচ্ছেন। আবার স্কুল ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে ছাগল, হাঁস ও মুরগিকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। এছাড়াও বাড়ির সকল কাজ তিনি নিজ হাতেই করেন। কোনো কিছুতেই তার অলসতা নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসিনা খাতুনের স্বামী আবুল কাশেম দিনমজুরের কাজ করেন। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। উভয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন।

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাখিদা সাহা ও বাধন মালাকার জানায়, বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতি দিন স্কুলে আসেন হাসিনা বেগম। লেখাপড়ায়ও খুব মনোযোগী তিনি। তার সহপাঠীরাও খুব খুশি তাকে সহপাঠী হিসেবে পেয়ে। প্রথম শ্রেশি থেকে তাদের সঙ্গে পড়ছেন হাসিনা বেগম।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া আফরিন ও লামিয়া বলে, আমরা কেউ তাকে দাদি আবার কেউ বান্ধবী বলে ডাকি। অবসর সময়ে তিনি আমাদের বিভিন্ন গল্প শুনান।

স্থানীয় বাসিন্দা রেনু বেগম জানান, ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে সবই সম্ভব তারই দৃষ্টান্ত হাসিনা খাতুন। তিনি এক সময় নিরক্ষর ছিলেন। এখন তিনি তার নাম লিখতে পারেন। হিসাব কষতে পারেন । গড়গড় করে বই পড়তে পারেন। আমরা তাকে সব সময় উৎসাহ দিই।

প্রতিবেশী আব্দুল কাদের বিশ্বাস জানান, হাসিনা খাতুন তার চাচি হন। প্রথম শ্রেণি থেকেই এই স্কুলে পড়ছেন তিনি। পাড়া-পড়শী অনেকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ মন্তব্য করেন। কিন্তু হাসিনা খাতুন সেসব কথায় কোনো মন্তব্য করেন না। তিনি তার মতো নিয়মিত স্কুলে পড়াশোনা করেন।

হাসিনা খাতুন বলেন, ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করব। সন্তানরা বড় হয়ে গেছে। তারা বিয়ে করে এখন নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এখন আমার অফুরন্ত সময়। এই সময়ে বসে না থেকে আমি পড়তে শুরু করেছি।


তিনি আরও বলেন, এক সময় পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে কোথাও গেলে তারা আমাকে নিয়ে মশকরা করতো। লেখাপড়া জানতাম না যার কারণে তারা আমাকে মূর্খ বলতো। ছোটবেলায় বাবা-মা গরিব ছিল, যার কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। আবার গ্রামের আশপাশে কোনো স্কুল ছিল না। বিয়ের পর চিন্তা করি সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবো। তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। এখন নিরিবিলি। যার কারণে স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

হাসিনা খাতুন বলেন, প্রথমে স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকার সহযোগিতায় স্কুলে ভর্তি হই। এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়তে খুব ভালো লাগে।

তিনি জানান, এই বয়সে চাকরি কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি লেখাপড়া করতে চান তা নয়। জ্ঞান অর্জন করাই তার লক্ষ্য। সুযোগ পেলে যতদূর সম্ভব পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান।

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা বেগম  বলেন, ৫ম শ্রেণিতে মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল নং ২৭। এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। তার আগ্রহের ফলে তাকে ভর্তি নিয়েছি।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আক্তার বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা তাকে খুবই সহযোগিতা করেন। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে হাসিনা খাতুন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।