• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ফাতেমা পান্না এখন উদ্যোক্তা, করছেন মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২১  

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: ফার্নিচার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সুমন চেয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী মিসেস ফাতেমা পান্না পারিবারিক কাজে সময় দেবেন। আর দশজন গৃহবধূর মতো সংসার আগলে রাখবেন। কিন্তু ফাতেমা পান্না জীবনের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষকে সহায়তা করবেন। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।  স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বাবার অনুপ্রেরণায় মাধ্যমিকে পড়ার সময় সেলাই প্রশিক্ষণ শিখেন। প্রশিক্ষণ শেষে একটি সেলাই মেশিন কিনেন। ১৯৯৬ সালে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফাতেমা পান্না পথচলা শুরু হয়। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে।

এখন এই নতুন উদ্যোক্তা ফাতেমা পান্না নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা আলাওয়ালপুর ইউনিয়নে ’ভাই বোন সততা ফার্ম ও মৎস্য খামার' নামের মৎস্য ব্যবসা আছে তার। গ্রামের নারীদের সাবলম্বি করার জন্য সেলাইমেশিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। ৫টি সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ দেখাচ্ছেন। দুইজন প্রশিক্ষক কাজ শিখান। এতে কাজ শিখছেন এলাকার ২০ নারী জন। এছাড়া পুরুষদের ড্রাইভিং শিখানোর জন্য দুটি প্রাইভেট কার আছে তার। নানা ধরনের বাধা পেরিয়ে ফাতেমা এখন উদ্যোক্তা। বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি'র সদস্য তিনি।

মিসেস ফাতেমা পান্না বাবার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাওয়ালপুর ইউনিয়নের আবুল ঢালীরকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত হাজি লুৎফর রহমান। তার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৯৯ সালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে ২০০২ সালে বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি ও ২০০৫ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৯৯ সালে মিজানুর রহমান সুমন সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তার শশুরবাড়ি লক্ষিপুর জেলায়। তবে তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকা থাকেন। ঢাকা পান্থপথে স্বামীর সঙ্গে ফার্নিচার ব্যবসা করতেন তিনি। এখন তিনি আবার শরীয়তপুরে ফিরে এসেছেন।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনা ফাতেমা পান্নার মুখেই। তিনি বলেন, বিয়ের আগে বাবার একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশিক্ষক দ্বারা সেলাই প্রশিক্ষণ শিখি। এরই মাঝে বিয়ে হয়ে যায়। পরে স্বামীর সঙ্গে ঢাকা চলে যাই।
আমার দুই ছেলে এক মেয়ে।

তিনি বলেন, সেলাইয়ের কাজ ও মৎস্য চাষ করে জমানো ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসি। ওই টাকা দিয়ে গ্রামের নারীদের সাবলম্বি করার জন্য সেলাইমেশিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি । ৫টি সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ দেখানো হচ্ছে। দুইজন প্রশিক্ষক। এতে কাজ শিখছেন এলাকার ২০ নারী। এছাড়া পুরুষদের ড্রাইভিং শিখানোর জন্য দুটি প্রাইভেট কার আছে।

তাছাড়া স্বামীর সহযোগিতায় দুই বছর যাবত এলাকার সাতটি মাছের ঘের লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। এলাকার বেকার নারী-পুরুষদের কর্মসংস্থান করাই আমার লক্ষ্য  ও উদ্দেশ্য।

ওই এলাকার সমাজসেবক সুমাইয়া বলেন, ফাতেমা পান্না স্বপ্নচারী ও পরিশ্রমী নারী। বাধা পেরিয়ে এতটুকু পথ এসেছেন। নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পুরুষদেরও কাজ দিচ্ছেন তিনি। তিনি একজন নতুন উদ্যোক্তা। নারী হয়েও সমাজের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
 
ফাতেমা পান্না স্বামী মিজানুর রহমান সুমন
বলেন, পান্নার অদম্য সাহস, পরিশ্রম ও ত্যাগের কারণে শরীয়তপুরে পরিচিতি পেয়েছে। এখন আমি ওর কাজে সহযোগিতা করছি।