• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কেয়ামতের আগে যে বিষয়গুলো দৃশ্যমান হবে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২১  

কোনো জিনিস ধ্বংস হওয়ার পূর্বে তার দুর্বল হওয়ার আলামতগুলো প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে ধ্বংস করার পূর্বে কিছু আলামত প্রকাশ করবেন। যাতে পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষগুলো সতর্ক হয় এবং পরকালের স্থায়ী জীবনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তিনি এর মাধ্যমে সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং সীমালংঘনকারীদেরকে শাস্তি দিবেন।

আল্লাহর ইচ্ছেতে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি। আবার তার ইচ্ছেতেই এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। একদল আসছে, অন্য দল প্রস্থান করছে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যেদিন পৃথিবীতে বসবাসরত সকল মানুষ একইসঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাবে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সূর্যকে আলোহীন করা হবে। নক্ষত্র খসে পড়বে। পাহাড় উড়তে থাকবে। সমুদ্রকে অগ্নিময় করা হবে। আকাশকে আবরণমুক্ত করা হবে। সাগরের ঢেউ থেমে যাবে। নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাবে। সেদিন সবাইকে নতুন এক জগতে ফিরে যেতে হবে।

কেয়ামতের আগে শুরু হবে ভয়াবহ বিশৃংখলা। ফিতনা শব্দটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এই শব্দটি আমাদের কাছে বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত হলেও এর সঠিক অর্থ অনেকেই জানি না। ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে এ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। জানতে হবে ফিতনার আলামতগুলো সম্পর্কে। আজকে আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ফিতনা কাকে বলে?

‘ফিতনা’ একটি আরবি শব্দ। তার অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। অভিধানবিদ আজহারি বলেন, ‘আরবি ভাষায় ফিতনার সামগ্রিক অর্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আগুনে পুড়িয়ে সোনার আসল-নকল ও মান যাচাইপ্রক্রিয়া বোঝাতে ফিতনা শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতেও এরূপ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।’ ‘সেদিন তাদের আগুনে পোড়ানো হবে।’ (তাহজিবুল লুগাহ, ১৪/২৯৬)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘‘মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে; আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?’’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২) উল্লিখিত আয়াতে ‘য়ুফতানুন’ শব্দটি ‘ফিতনা’ থেকে এসেছে, যা পরীক্ষার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে ফিতনা হত্যা অপেক্ষা মারাত্মক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৭)

প্রিয় নবী (সা.) স্বীয় উম্মতদের ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিসে ফিতনার বিভিন্ন আলামত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে এ ধরনের কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো-

দ্বীনের ইলম উঠে যাওয়া

ইলম উঠে যাওয়া কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি এটি উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ একটি ফিতনা। মানুষ আলেমদের অবমূল্যায়ন করতে শুরু করবে। ফলে প্রকৃত ইলম আস্তে আস্তে উঠে যাবে। মানুষ বিভ্রান্ত হতে থাকবে। সবাই নিজেকে আল্লামা ভাবতে শুরু করবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ৭০৬২)

মুসলমানদের পরস্পর লড়াই

পৃথিবীর মানুষ একে অপরকে দমানোর জন্য সব পদক্ষেপই গ্রহণ করে বসে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে এমন বিবাদে জড়ানো ফিতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আহনাফ ইবনে কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সিফফিনের যুদ্ধে) এক ব্যক্তিকে (আলী রা.)-কে সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবু বাকরাহ্ (রা.)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি।’ তিনি বললেন, ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে দুজন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১)

হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ বেড়ে যাবে

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে কি দোষে সে অন্যকে হত্যা করেছে এবং নিহত লোকও জানবে না যে কি দোষে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে এমন অত্যচার হবে? তিনি জবাবে বললেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরূপ যুগের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামি হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৯৬)

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও বড় বড় দালান

ফিতনার যুগে প্রযুক্তিগত দিক থেকে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বড় বড় দালানকোঠা হবে, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হবে। যা বর্তমানে আমরা খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই দেখছি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যখন মক্কা শরিফের টিলার উদর বিদীর্ণ করা হবে আর নির্মিত ভবনগুলো মক্কা শহরের পাহাড়গুলোর চেয়ে উঁচু হবে তখন মনে কর ফিতনার সময় সন্নিকটে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭/৪৬১)

পূর্বেকার হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখন তো মক্কা শরিফ পাথুরে ভূমি এবং পাহাড়ি এলাকা, তবে ভবিষ্যতে কোনো কালে আল্লাহ তাআলা এ শহরে নদী এবং খাল-বিল সৃষ্টি করবেন। কিন্তু আজকের সুরঙ্গ পথগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, কীভাবে মক্কা নগরীর টিলাগুলো বিদীর্ণ করা হয়েছে। আর উঁচু বিল্ডিং নির্মাণের দিক থেকে পৃথিবী এতটাই এগিয়েছে যে মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে আকাশের কোনো একটি গ্রহাণু থেকে ঝুলন্ত বিল্ডিং নির্মাণ করবে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যে সকল হাদিসে আগত ফিতনাসমূহের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো মুসলমানদের বিশেষভাবে স্মরণ রাখা উচিত। হজরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রহ. ‘হাদিসের দৃষ্টিতে বর্তমান যুগ’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটিতে তিনি ফিতনার যুগ সম্পর্কিত প্রায় সব হাদিস একত্র করেছেন। তাতে তিনি এমন একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, যাতে রাসুল (সা.) ফিতনার যুগের বাহাত্তরটি আলামত বলেছেন। হাদিসটি পড়ুন এবং আজকের অবস্থা মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন, আজকের অবস্থার সঙ্গে হাদিসের বক্তব্যের কি চমৎকার মিল!