• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ঘূর্ণিঝড়-তুফানের সময় নবিজি (সা.) কী করতেন?

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২২  

ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ

 

‘আল্লহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহি ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’

হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ ঝড়ো হাওয়ার কল্যাণের দিক কামনা করছি। কামনা করছি এর মধ্যে যা কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে কারণে এ ঝড়ো হাওয়া পাঠানো হয়েছে সে কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই তোমার কাছে এর ক্ষতির দিক থেকে এবং এতে যা কিছু ক্ষতি নিহিত আছে এবং যে ক্ষতির জন্য তা পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (মিশকাত)

একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উৎকণ্ঠা অনুভূত হলে তিনি তাঁর কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন-

‘হে আয়েশা! এ ঝড়ো হাওয়া এমনতো হতে পারে যা ’আদ’ জাতি ভেবে ছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ’তারা যখন একে তাদের মাঠের দিকে আসতে দেখলো, (তারা) বললো, এটা তো মেঘ। আমাদের ওপর পানি বর্ষণ করবে’- (সুরা আল আহক্বাফ : আয়াত ২৪)।’ (বুখারি, মুসলিম, বায়হাকি)

 

নবিজি বলেন, ‘আর ’আদ’ জাতি পশ্চিমা বাতাস দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

‘তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনন ঝড়-তুফান দেখতেন তখন তার প্রভাব তাঁর চেহারায় উদ্ভাসিত হয়েছে বলে বুঝা যেতো।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

এ কারণেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝড়-তুফানের সময় বিভিন্ন দোয়া ও রহমত কামনা করতেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে। এর মধ্য থেকে কিছু তুলে ধরা হলো-

১. ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ

উচ্চারণ :আল্লহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহি ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ ঝড়ো হাওয়ার কল্যাণের দিক কামনা করছি। কামনা করছি এর মধ্যে যা কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে কারণে এ ঝড়ো হাওয়া পাঠানো হয়েছে সে কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই তোমার কাছে এর ক্ষতির দিক থেকে এবং এতে যা কিছু ক্ষতি নিহিত আছে এবং যে ক্ষতির জন্য তা পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (মিশকাত)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনআমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। বাতাস আল্লাহর তরফ থেকে আসে। এ বাতাস রহমত নিয়েও আসে। আবার আজাব নিয়েও আসে। তাই একে গাল মন্দ দিও না। বরং আল্লাহর কাছে এর কল্যাণের দিক কামনা করো ও মন্দ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও।’ (আবু দা্উ ৫০৯৭মুসনাদে আশ্ শাফেঈ ৫০৪ইবনু মাজাহ ৩৭২৭মুসনাদে আহমাদ ৭৬৩১ইবনু হিব্বান ১০০৭, মিশকাত ১৫১৬)

৩. হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বাতাসকে অভিশাপ দিলো। (এ কথা শুনে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাতাসকে অভিশাপ করো না। কারণ তারা আজ্ঞাবহ। আর যে ব্যক্তি এমন কোন জিনিসকে অভিশাপ দেয় যে জিনিস অভিশাপ পাবার যোগ্য নয়। এ অভিশাপ তার নিজের ওপর ফিরে আসে। (তিরমিজি ১৯৭৮, আবু দাউদ ৪৯০৮, ইবনু হিব্বান ৫৭৪৫, মিশকাত ১৫১৭)

৪. হজতে উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা বাতাসকে গালি-গালাজ করো না। বরং তোমরা যখন (এতে) মন্দ কিছু দেখবে বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খায়রা হাজিহির রিহা ওয়া খায়রি মা ফিহা ওয়া খায়রি মা উমিরাত বিহি ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি।’

‌‌‌‘হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে এ বাতাসের কল্যাণ দিক কামনা করছি। এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা এবং যে জন্য তাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে তার ভাল দিক চাই। আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই, এ বাতাসের খারাপ দিক থেকে। যত খারাপ এতে নিহিত রয়েছে তা থেকেও। এ বাতাস যে জন্য নির্দেশিত হয়েছে তার মন্দ দিক থেকেও। (তিরমিজি ২২৫২, ইবনু আবি শায়বা ২৯২১৯, মুসনাদে আহমাদ ২১১৩৮, মিশকাত ১৫১৮)

৫. হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু করলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটু ঠেক দিয়ে বসতেন আর বলতেন-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رَحْمَةً وَلَا تَجْعَلْهَا عَذَابًا اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رِيَاحًا وَلَا تَجْعَلْهَا رِيحًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাঝআলহা রাহমাতান ওয়া লা তাঝআলহা আজাবান আল্লাহুম্মাঝআলহা রিহান ওয়া লা তাঝআলহা রিহান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ বাতাসকে তুমি রহমতে রূপান্তরিত করো। আজাবে পরিণত করো না। হে আল্লাহ! একে তুমি বাতাসে পরিণত করো। ঝড়-তুফানে পরিণত করো না।’ (মিশকাত ১৫১৯)

৬. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকাশে মেঘ দেখলে কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে তার দিকেই নিবিষ্টচিত্ত হয়ে যেতেন। তিনি বলতেন-

للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهِ

আল্লহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা ফিহি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই। এতে যে মন্দ রয়েছে তা থেকে।

এতে যদি আল্লাহ মেঘ পরিষ্কার করে দিতেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন। আর যদি বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হতো, তবে বলতেন-

اللَّهُمَّ سَقْيًا نَافِعًا

আল্লাহুম্মা সাক্বইয়ান নাফিআ’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি কল্যাণকর পানি দান করো।’ (ইবনু মাজাহ ৩৮৮৯, মুসনাদ আশ-শাফেঈ ৫০১, আবু দাউদ ৫০৯৯, নাসাঈ ১৮৩০, মিশকাত ১৫২০)

৭. হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন, বজ্রপাতের শব্দ শুনলে বলতেন-

اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা- বিআজাবিকা ওয়া আফিনা ক্ববলা জালিকা’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের তোমার গজব দ্বারা মৃত্যু দিও না এবং তোমার আজাব দ্বারা ধ্বংস করো না। বরং এ অবস্থার আগেই তুমি আমাদের নিরাপত্তার বিধান করো।’ (তিরমিজি ৩৪৫০, মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ ২৯২১৭, মুসনাদে আহমাদ ৫৭৬৩, মিশকাত ১৫২১)

৮. হজরত আমির ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন। তিনি বলতেন, আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সত্তার, যার পবিত্রতা বর্ণনা করে ‘মেঘের গর্জন, তার প্রশংসাসহ ফেরেশতাগণও তার ভয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করেন।’ (মুয়াত্তা মালিক ৩৬৪১, ইবনু আবি শায়বাহ ২৯২১৪, বায়হাকি ৬৪৭১, আদাবুল মুফারাদ ৭২৩, মিশকাত ১৫২২)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উল্লেখিত দোয়া ও আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।