• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

শ্রী ফিরে পেয়েছে শ্রীপুরের রাংপানি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২১  

সকালে শরতের স্নিগ্ধতা ছিল। তবে বেলা বাড়লে মনে হতে থাকল প্রকৃতিতে যেন গ্রীষ্মের দাবদাহ ভর করেছে। রোদ আর গরমে নাকাল হয়ে আমরা ছুটছি সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে। সড়কের দুপাশের হাওরের অদূরে হালকা কুয়াশার আবরণ। ভরদুপুরে গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে এক রাখাল বালক। হাওরের পানিতে মাছ ধরছে ছেলে-বুড়ো। মেঘালয়ের জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড় হাতছানি দিচ্ছিল হরিপুর থেকেই। গন্তব্যের যত কাছে যাচ্ছিলাম, জৈন্তা পাহাড় ততই দৃশ্যমান হচ্ছিল। এসব মন হারানো দৃশ্য দেখতে দেখতেই বাইক থামল সিলেট শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে, শ্রীপুরে।

শ্রী মানে সুন্দর, এর সঙ্গে ‘পুর’ যুক্ত হয়ে ‘শ্রীপুর’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই ভরপুর যে এলাকার নামই হয়েছে ‘শ্রীপুর’। এই শ্রীপুরেই অবস্থান সীমান্তবর্তী নদী ‘রাংপানি’র। মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে স্বচ্ছ জলের রাংপানির উৎপত্তি। অনেকের কাছে শ্রীপুর পাথরকোয়ারি নামেও পরিচিত।

স্থানীয়দের নৌকায় ঘুরতে পারেন রাংপানির বুকে

স্থানীয়দের নৌকায় ঘুরতে পারেন রাংপানির বুকে

রাংপানি নদীর পাশেই রয়েছে খাসিয়াদের গ্রাম মোকামপুঞ্জি। খাসিয়ারা গ্রামকে পুঞ্জি নামেই ডাকে। প্রাচীনকাল থেকে এই নদী আর পাহাড় ঘিরে তাদের বসবাস। পুঞ্জিতে গেলেই জানা যাবে খাসিয়াদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। রাংপানি আর পুঞ্জির আশপাশের এলাকায় আশি ও নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক ছবির শুটিং হয়েছে। শাবনাজ-নাঈম জুটির প্রথম ছবি চাঁদনীর জনপ্রিয় গান ‘ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন জাদু জানে রে’ ছাড়াও বেশ কিছু দৃশ্য শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে চিত্রে ধারণ করা হয়েছিল।

একসময় সরকারঘোষিত পাথরকোয়ারির জন্য শ্রী হারাতে থাকে শ্রীপুর। পর্যটকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। রাংপানি তাই তো এই প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা। আমরা অজানাকে জানার জন্যই শ্রীপুরে যাত্রা করেছিলাম। রাংপানি নদী আর তার চারপাশের প্রকৃতি আমাদের মুগ্ধ করেছে।

রাংপানির পারে কাশবন

রাংপানির পারে কাশবন

পাহাড়ি সরু পথ ধরে নিচে নামতেই রাংপানির দুপাশের কাশফুল হেলেদুলে অভ্যর্থনা জানাল। চোখে পড়ল নদীর উৎসমুখে নীল পানি। নদীর কোলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে হরেক রঙা পাথর। পাথর তোলা স্থানগুলো দ্বীপের মতো হয়ে আছে। কোনোটিতে জমে আছে পানি। পাশেই পড়ে আছে বালু ও পাথরবাহী বারকি নৌকা। নদী লাগোয়া বাসিন্দারা কেউ কেউ গোসল করছেন সেই পানিতে। পানি কম থাকায় রাংপানির বুকে জাল ফেলে মাছ ধরছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। একে একে চোখে ভাসতে থাকল এমন সব দৃশ্য। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক সুশ্রী নকশিকাঁথা।

রাংপানির সৌন্দর্য দেখা ও ছবি তোলা শেষে যখন ফিরছি, সাদা মেঘে তখন অস্পষ্ট জৈন্তা পাহাড়। মৃদৃ বাতাসে নদীপারের কাশফুল হেলেদুলে বিদায় জানায় যেন। এমন প্রাকৃতিক রূপের জাদুতে কখন যেন মনটা আনমনে গেয়ে উঠল, ‘ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন জাদু জানে রে...’।

দূর পাহাড় থেকে নেমে এসেছে রাংপানি নদী

দূর পাহাড় থেকে নেমে এসেছে রাংপানি নদী

যাবেন যেভাবে

দেশের যেকোনো স্থান থেকে সিলেটে আসতে হবে। শহর থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে সরাসরি যাওয়া যায় জৈন্তাপুরের শ্রীপুরে। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নেবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। জৈন্তাবাজার বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পর শ্রীপুর চা-বাগান। এর উল্টো দিকে ধরে সরু পথ পাড়ি দিলেই রাংপানি নদী। স্থানীয় বারকি নৌকা নিতে পারেন নদীর ওপারে যেতে। নৌকার ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে আগেই। দুপুরের খাবার জৈন্তা বা মোকামপুঞ্জি এলাকায় সেরে নিতে পারেন। সঙ্গে নেওয়া খাবার শেষে পলিথিন ব্যাগ বা অন্য কিছু পর্যটন এলাকায় ফেলবেন না।