• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

অভিবাসী কর্মীদের সুবিধায় কাতারের শ্রম আইনে ঐতিহাসিক পরিবর্তন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে কাতারের শ্রম আইনে এসেছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত শ্রমিকবান্ধব পরিবর্তন। এখন থেকে কর্মস্থল পরিবর্তনের জন্য কর্মীদের আর নিয়োগদাতার কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেয়ার প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি, কর্মীদের সর্বনিম্ন মজুরি এক হাজার রিয়াল নির্ধারণ করেছে দেশটির সরকার।

কাতারের শ্রম আইনে কর্মীদের অধিকারের বিষয়টিকে উপেক্ষা করার অভিযোগ ছিল বহু আগে থেকে। তবে দেশটিকে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষণার পর থেকেই ব্যাপক আলোচনায় আসে বিতর্কিত এ আইন। বিশেষ করে নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণসহ অবকাঠোমো উন্নয়নে অভিবাসী শ্রমিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য এবং অনিয়মগুলো হয়ে উঠেছিল উদ্বেগের কারণ। এ অবস্থার উন্নয়নে ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত রোববার শ্রম আইনে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে কাতারের প্রশাসনিক উন্নয়ন, শ্রম ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রণালয় (এমএডিএলএসএ)।

কাতারের কাফালা ব্যবস্থায় অভিবাসী কর্মীদের এখন থেকে কর্মস্থল পরিবর্তনের জন্য নিয়োগদাতার এনওসি নিতে হবে না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্দিষ্ট সময়ের নোটিশে চাকরি ছাড়তে পারবেন কর্মীরা।

কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তির প্রথম দুই বছরের মধ্যে কর্মস্থল পরিবর্তন করতে চাইলে কর্মীদের এক মাস এবং দুই বছরের পরের চুক্তিতে থাকলে দুই মাসের নোটিশ দিতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব জায়গায় কর্মীরা নতুন আইনে নির্ধারিত সর্বনিম্ন মজুরি এক হাজার রিয়ালের কম পাচ্ছেন, তাদের চুক্তি হালনাগাদ করতে নিয়োগদাতাদের সঙ্গে কাজ করবে কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয়। অফিসিয়াল গ্যাজেট আকারে প্রকাশের ছয় মাস পর থেকে কার্যকর হবে এ নিয়ম।

কাতারে বেতন বকেয়া, পাওনা মজুরি না দেয়া এবং এনওসি বিধিনিষেধের কবলে পড়া অভিবাসী কর্মীদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির অভিবাসী কর্মীদের পর্যাপ্ত ও সময়মতো মজুরি লাভের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

এ বিষয়ে এমএডিএলএসএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘মজুরি সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে আমাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নতুন সংশোধনীতে... কর্মীদের মজুরি এবং উপযুক্ত আবাসন সুবিধা দিতে ব্যর্থ নিয়োগদাতাদের জরিমানা ও কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।’

নতুন সংশোধনীতে কর্মীদের জন্য এক হাজার রিয়াল সর্বনিম্ন মজুরির পাশাপাশি চুক্তিতে আবাসন এবং খাবারের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলে এর জন্য যথাক্রমে ৫০০ ও ৩০০ রিয়াল দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়।

কাতারের শ্রম আইন সংশোধনকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ ঘটনাকে দেশটির শ্রম সংস্কারের ইতিহাসে বড় মাইলফলক বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

কাতারে আইএলও’র প্রকল্প কর্মকর্তা হুটান হোমায়ৌনপুর বলেন, ‘কাফালা ব্যবস্থার শেষ সমস্যা ছিল এনওসি। কর্মী এবং নিয়োগদাতার মধ্যে তৈরি হওয়া সেই ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা আর থাকছে না।

তিনি বলেন, ‘এর ফলে শ্রমিক, মালিক, দেশ সবারই উপকার হবে। নিয়োগদাতারা তাদের প্রস্তাবিত কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মী খুঁজে নিতে পারবেন এবং কর্মীরাও তাদের জন্য আরও বেশি উপযুক্ত চাকরির সন্ধান করতে সক্ষম হবেন।’