• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

অর্থনীতি-প্রযুক্তিতে চীন-বাংলাদেশের সীমাহীন সম্ভাবনা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২০  

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রধান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান। এদেশের পরিবহন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ সব খাতেই তাদের আনাগোনা। এতে শুধু বাংলাদেশই নয়, লাভবান হচ্ছে চীনও।

সম্প্রতি চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পত্রিকাটির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নিজের অভিমত জানিয়েছেন তিনি।

গ্লোবাল টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশের দলে যোগদানের লক্ষ্যে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ সরকার।

এক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর সম্পর্ক বহুদিনের। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর গত ৪৫ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের লেনদেনে সুষম গতি বজায় রয়েছে। অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সহায়তা ক্রমাগত গভীর হচ্ছে। সাংস্কৃতিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। চীন ও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের পরিপূরক এবং এক্ষেত্রে আরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষভাবে রেলওয়ে প্রকল্পগুলো দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বৃহত্তম খাত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মাসেতুর রেলওয়ে প্রকল্পে অগ্রাধিকার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এটি চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ‘বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম)’ অর্থনৈতিক করিডোরের অন্যতম উপাদান। এটি নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।

পদ্মাসেতু প্রকল্পটি ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বাংলাদেশের ছয়টি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কাজ শুরুর পর থেকে এটি পাঁচ হাজারের বেশি প্রত্যক্ষ চাকরি এবং লাখো পরোক্ষ চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এটা সেই প্রকল্প, যা চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানীয় চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শক্ত ভূমিকা রাখছে বলে বিশ্বাস লি জিমিংয়ের।

পদ্মাসেতু ছাড়াও বাংলাদেশের আরও কয়েকটি বৃহত্তম প্রকল্পে যুক্ত চীন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, পায়রায় ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চার স্তরের জাতীয় ডেটা সেন্টার প্রভৃতি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এর মধ্যেই বহু লেন বিশিষ্ট কর্ণফুলী টানেলের কাজ ঠিকভাবেই এগিয়ে চলেছে। বস্তুত, এটি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে।

গত ২ আগস্ট টানেলের বাম লেনের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে এটি বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ারও প্রথম ভূগর্ভস্থ টানেল হবে, যা বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর এবং বিআরআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ট্র্যাফিক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে, পাশাপাশি বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, কর্ণফুলী টানেলের বাম লেনের কাজ সফলভাবে শেষ করার পর প্রকল্পটি দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় প্রচুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় অগ্রগতি হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এর বাস্তব ফলাফল প্রদর্শনের মাধ্যমে চীনের উন্নত টানেল নির্মাণ প্রযুক্তি এবং অনন্য পরিচালনা দক্ষতার ভালো ব্র্যান্ড ইমেজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

চীনা পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের অন্যতম গতিশীল দেশ। এর প্রচুর শ্রম সংস্থান এবং বিশাল বাজার রয়েছে। তবে দেশটির পরিকাঠামো মারাত্মক অপ্রতুল। সেখানে চীনের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পরিপূর্ণ উৎপাদন সরবরাহ সুবিধা। তবে চীন ও বাংলাদেশের উন্নয়নের স্তরগুলো তুলনামূলকভাবে একই।

এ বিষয়ে লি জিমিং বলেন, চীন নিজেদের উন্মুক্তকরণ অব্যাহত রেখেছে। বিআরআইয়ের অধীনে চীন বিভিন্ন উপায়ে, যেমন- অগ্রাধিকারযোগ্য ঋণ, বিনিয়োগ, প্রকল্প চুক্তি ও বিনামূল্যে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ভবিষ্যতে আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশ নেবেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ-প্রযুক্তির ক্ষেত্র, যেমন- ৫জি, হাই-স্পিড রেল, মহাকাশ এবং ব্লু ইকোনমিতে আরও বিনিয়োগ সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। দুই দেশ যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য নির্মূল, মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে পারে।