• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দেখি বাংলার রূপঃ

ইতিহাসের নির্দশন প্রাচীন ধানুকা মনসা বাড়ী

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি ২০১৯  

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুর পৌরসভার ধানুকা গ্রামে ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে মনসা বাড়ী। ঐতিহাসিক গনের মতে প্রায় ৬শ বছরের প্রাচীন এ বাড়ীটি ঘিরে রয়েছে নানান কিংবদন্তী ও লোক কথা। জেলার প্রাচীন ব্যক্তিগন এ বাড়ীকে ময়ুর ভদ্রের বাড়ী নামে ডেকে থাকেন। সুলতানী ও মোগল আমলের নির্মাণ শৈলিতে নির্মিত এ বাড়ীতে ৫টি ইমারত আছে যা এখন অযতœ অবহেলায় ও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বাড়ীর ৫টি ইমারতের মধ্যে ছিল দূর্গামন্দির, মনসা মন্দির, কালি মন্দির, নহবদখানা ও আবাসিক ভবন।
কিংবদন্তি থেকে জানা যায় তৎকালিন সময়ে সর্ববৃহৎ ও ব্যাপক আকারে অত্র অঞ্চলের মধ্যে একটিতেই মনসা পূজার আয়োজন হতো। আর এখানে পূজা দেওয়ার জন্য ভারত বর্ষের বহু লোকের আগমন ঘটতো বলে বাড়ী বাড়ীটি মনসা বাড়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বাড়ীর পাশে স্থাপিত ছিল মহিলা মনসা মন্দির ও শিব মন্দির। আরেক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় ভারতের কৌনজ থেকে তৎকালিন সময়ে ধনাঢ্য ভট্রাচার্য পরিবার ধানুকা অঞ্চলে বসবাস শুরুকরে। তারা শিক্ষা ধর্ম পরায়নতা, অর্থ বৃত্তে সমৃদ্ধ ছিল বলে জানা যায়। আর তাদেরই পূর্ব পুরুষ ছিলেন ময়ুর ভট্ট। ময়ুর ভট্টের জন্ম বৃত্তান্ত জানতে গিয়ে জানা যায় তিনি যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন তার পিতা মাতা তীর্থের জন্য কামিধামে যাত্রা করেন। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা কি রূপ ছিল তা আজকের শরীয়তপুর বাসী অবশ্য কল্পনাও করতে পারবেনা। দীর্ঘ যাত্রা পথে ময়ুর ভট্ট এক বনের ধারে জন্ম গ্রহন করেন। তার ধর্মেক জনক জননী ধর্ম ও দেবতাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তারা পুত্রকে শাল পাতায় আচ্ছাদিত করে কাশিতে যাত্রা করেন। গন্তব্যে পৌছে পূজো দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে তারা স্বপ্ন দেবতার মাধ্যমে জানতে পারে তাদের পুজা দেবতার নিকট গ্রহন যোগ্য হয়নি। তারা শিশুটি ফেলে যাওয়ার সময় ভূলে গিয়েছিল মানুষের জন্য ধর্ম ধর্মের জন্য মানুষ নয়। তারা তাদের ভূল বুঝতে পেরে দ্রুত ফিরে এসে দেখেন নির্দিষ্ট স্থানে এক ঝাক ময়ুর শিশুটিকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। ময়ুরের আশ্রয়ে বেঁচে ছির বলে ঐ শিশুর নাম রাখা হয়েছিল ময়ুর ভট্টো। তাঁর নামে বাড়ী নাম করন করা হয়। ময়ুর ভট্টের বাড়ী মনসা বাড়ী নাম করনের বিষয় অনুসন্ধ্যান করে জানা যায়, সম্ববত এ বাড়ীর কিশোর একদিন প্রত্যশে বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে বাগানে মস্তবড় সাপ দেখে আসেন। পর দিনও তাই অবস্থা। তৃতীয় দিনে সাপটি তার পিছন পিছন বাড়ী এসে নৃত্য করতে থাকে। বাড়ীর লোকজন ভয়ও বিস্ময়ে বিষয়টি অনুধাবন করতে থাকেন। রাতে মনসা দেবীর মাধ্যমে আদৃষ্ট হয়ে নতুন করে মনসা মন্দির স্থাপন করে পূজা শুরু করা হয়। এখনও এ বাড়ীতে মনসা পূজার সময় সাপের সমাগম হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী। এ বাড়ীতে রয়েছে পিতলের মূর্তি। যে মূর্তিটি তৎকালিন সময় কীর্তিনাশা নদীতে মাছ ধরার সময় জালে মূর্তিটি পেয়ে জেলে অলৌকিক ভাবে এ মন্দিরে রেখে যান। যা আজঅবধি এ মন্দিরে আছে।
ঐতিহাসিক পুথি এ বাড়ী থেকে ১৯৭৩ সালে ভাষা সৈনিক ও জেলার ইতিহাস গবেষক জালাল উদ্দিন আহম্মেদ কাঠের বাধাই করা ও তুলট কাগজে লিখিত পুথি উদ্ধার করেন। যা কয়েকটি কপি নেপালে পাঠানো হয়। আজ বেশ কয়েকটি কপি এখন শরীয়তপুর জেলার বে-সরকারি পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। ধারনা করা হয় আজ থেকে সারে ৩/৪ শত বছর পূর্বে এই পুথি গুলো রচনা করা হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। তার প্রাচীন মহিলা কবি জয়ন্তী দেবীর পিতাই ময়ুর ভট্টো ছিলেন যার থেকে শিক্ষা পেযে তিনি বই পুথি গুলো রচনা করেছেন বলে প্রবীন শিক্ষক ও ইতিহাস গবেষক মাস্টার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ মনে করেন। ইতিহাস গবেষক মাস্টার জালাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, মনসা বাড়ী ও এর আশপাশে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্থাপনা ছিল যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চুরি এবং নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৯ সালে শরীয়তপুরের প্রথম মহকুমা প্রশাসক মোঃ আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে খনন ও সংস্কার শুরু হলেও দক্ষ লোকবল সহ নানা কারনে সে যাত্রা খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার মতে বাংলাদেশ প্রতœত্ব বিভাগ যদি বৈজ্ঞানী উপায়ে খনন কাজ পরিচালনা করে এর বাড়ীর ইতিহাস রহেশ্য উন্মোচন করতেন তাহলে আর কালের আবর্তে হারিয়ে যেতনা এই ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শনটি।
শরীয়তপুর এর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের  জানান,  শরীয়তপুর জেলা অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য মন্ডিত স্থাপনা রয়েছে যা সংস্কার ও রক্ষণা বেক্ষন করা হলে  ইতিহাস গবেষনার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। যার মধ্যে ৬শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ধানুকা মনসা বাড়ী সহ রুদ্রকর মট, মশুরার শিবমন্দির, রাজা চাঁদ রায়, কেদার রায়ের বাড়ী, মানসিংহের তোড়ন, কার্তিকপুর জমিদার বাড়ী, হাটুরিয়া মিয়া বাড়ীসহ সকল ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো সংরক্ষনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করে অর্থ বরাদ্য সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।