• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ঈদের আগে দেশব্যাপী হামলার পরিকল্পনা ছিল নব্য জেএমবির

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২০  

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গত ঈদুল আজহার পূর্বে জিলহজ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সামরিক শাখার সদস্যরা। এরই অংশ হিসেবে তারা গত ২৪ জুলাই ঢাকার পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে, গত ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে বোমা হামলা করে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বলছে, গত ২৩ জুলাই হযরত শাহজালাল মাজার শরিফে আরেকটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারা। এর মধ্যে তারা পল্টন ও সাপাহারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। কিন্তু সিলেটে পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নব্য জেএমবি’র পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

গ্রেফতাররা হলেন- শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সানাউল ইসলাম সাদি (২৮), রুবেল আহমেদ (২৮), আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০) ও সায়েম মির্জা (২৪)।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) অপারেশন এলিগ্যান্ট বাইট চালিয়ে সিলেটের মিরাবাজার, টুকের বাজার, দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যদিও এটা শেষ হয়ে যায়নি। বৈশ্বিক প্রভাব ও জাতীয় ঘটনা প্রবাহের কারণে। এটা থ্রেট ছিল বড় বড় যে জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো হয় তার আগে। গত ঈদের আগেও এ ধরনের সতর্ক বার্তা ছিল।’

Press

‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস প্রচার করে, জিলহজ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে হামলা করলে কথিত পুণ্যের অধিকারী হবে। এতে আইএস মতাদর্শী বিভিন্ন দেশের উগ্রবাদী গোষ্ঠী চেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে আইএস মতাদর্শী নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম উভয়েই চেষ্টা চালিয়েছে। আনসার আল ইসলাম ব্যর্থ হলেও সফল হয়েছে নব্য জেএমবি। তবে অন্যদের প্রচেষ্টা আইনশৃঙ্খলার সতর্কতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতাররা সবাই নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। তারা কথিত আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদুল আজহার পূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে তারা ২৪ জুলাই রাজধানীর পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে, ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে বোমা হামলা করে।’

নব্য জেএমবি’র সদস্যরা পল্টন ও সাপাহারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হলেও পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরিফে হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আটকদের সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবির শুরা সদস্য শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে তারা সিলেটের শাপলাবাগের একটি বাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।’

শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেন। তিনি ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে সিলেটের শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেন। কফি শপে (বারিস্তা) কপি মেকার হিসেবে কাজ করেন। সানাউল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ব্লু বার্ড সিলেট শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। সে সিলেটে টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা করেন। আব্দুর রহিম জুয়েল রেন্ট এ কারের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। তার গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। সায়েম মির্জা সিলেটের মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।