• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

এমপিওভুক্ত হচ্ছে ৩০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৯  

 


আসছে নতুন অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়ায় বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে জোরেশোরে। দীর্ঘ ৯ বছর পর এ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এবার অন্তত তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এমপিওভুক্তিতে কেবল যোগ্যতা নয়, বরং এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রতিটি উপজেলার অন্তত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে, দেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের সবিশেষ গুরুত্ব পেলেও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এ খাতের বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। তারা শিক্ষার জন্য পৃথক বাজেট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, অর্থবছরের শুরুতেই শিক্ষা খাতের অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করে নিয়ে ব্যয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তদারকি বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার বাজেট পর্যাপ্ত নয়। মোট বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ এই খাতে ব্যয় করা উচিত।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার বাজেট শুভঙ্করের ফাঁকি। এবারের বাজেটে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে এ খাতে। এর কারণ, এমপিওভুক্তি ও শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা চালু। তাহলে শিক্ষার মান উন্নয়নের টাকা কোথায়? টাকা ছাড়া শিক্ষানীতিই বা বাস্তবায়ন হবে কীভাবে?’ তিনি বলেন, বাজেটে শিক্ষা খাতে আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির বিরাট ফারাক রয়েই গেল।

প্রস্তাবিত এ বাজেটে দেখা গেছে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গতবারের চেয়ে টাকার অঙ্কে ও শতাংশের হিসাবে বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে তা ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তা বেড়েছে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ ভাগ অর্থ এবার এই খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্নেষণে দেখা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য এবারের বাজেটেও পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই। তবে শিক্ষা খাতে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এ ছাড়া চলমান প্রকল্পগুলোও চালিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ, স্কুল ফিডিং, আইসিটির ব্যবহার বাড়ানো, ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ, শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন, বৈশাখী ভাতা প্রদান চালিয়ে যাওয়া, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন ও মাদ্রাসা শিক্ষার যুগোপযোগীকরণের কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।

তবে বাজেটে ব্যাপকভাবে জনপ্রত্যাশা থাকলেও শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল, শিক্ষক নিয়োগের পৃথক কর্ম-কমিশন ও বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অপ্রাসঙ্গিক প্রশংসা ও নিন্দামন্দ বাদ দিয়ে বাজেটের ভারসাম্যপূর্ণ মূল্যায়ন করা দরকার। এতে মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি নতুন উদ্যোগের কথা বলা আছে। নতুন এমপিওভুক্তির সঙ্গে আগে থেকেই এমপিওভুক্তদের বৈশাখী ভাতা প্রাপ্তিসহ কিছু প্রত্যাশা পূরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে শিক্ষা বাদেও আরও ২৬টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের কথা বলা আছে। তিনি বলেন, এই ২৬টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে শিক্ষা খাতের পৃথক বাজেট প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে দেশে একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য এ বাজেটেই বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা আর মনিটরিং সবচেয়ে বেশি জরুরি।

এমপিওভুক্তি : জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঠিক কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, এর সংখ্যা তিন হাজারের কম হবে না।

জানা গেছে, এ বছর এমপিওভুক্তি খাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তত এক হাজার ২১০ কোটি টাকা খরচ করবে। গত জুলাইয়ে এমপিওভুক্তির এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারির পর যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করতে চারটি মানদ ঠিক করে মন্ত্রণালয়। এগুলোর জন্য রাখা হয় ১০০ নম্বর। গত বছরের আগস্টে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। ৯ হাজার ৬১৪টি আবেদন জমা পড়ে। সব শর্ত পূরণ করতে পেরেছে দুই হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান। তবে বাছাইয়ে দেখা গেছে, দেশের সব এলাকা এটি কভার করতে পারেনি। যেমন- ঢাকা-১২ আসনের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সব শর্ত পূরণ করে এ তালিকায় উঠে আসতে পারেনি। দেখা গেছে, দেশের অনেক উপজেলায় ১০ থেকে ১২টি যোগ্যতাসম্পন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পাওয়া গেছে। আবার অনেক উপজেলায় যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা একেবারেই কম। আবার কোনো উপজেলায় পাওয়াই যাচ্ছে না। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠানই মিলছে না। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন- প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটি যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করতে। এতে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবেদন করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে না। এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করতে গেলে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা লাগবে। এর মধ্যে এক হাজার ২২৭টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২১৯ কোটি ৭১ হাজার ৩০০ টাকা, এক হাজার ৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৬৮ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা, এমপিওভুক্ত তিন হাজার ২৭৫টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিকে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, ৫১৮টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং এমপিওভুক্ত এক হাজার ৩৩টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৭১৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা লাগবে। ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে লাগবে ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য লাগবে ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা, আর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য লাগবে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা।

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় :  জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়বিহীন জেলাগুলোতে একটি করে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে তার থেকে বেশ কয়েকটি স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ৪১তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুনামগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। এটি ছাড়া আরও প্রস্তাবিত তিনটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, বগুড়া, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ফরিদপুরসহ বহু জেলায় কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই।

৪৩১২ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা : বরাদ্দ বাড়ছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেও। তাই প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত করা হবে সারাদেশের চার হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। এতে এসব মাদ্রাসায় কর্মরত প্রায় সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষকের সরকারি বেতন চালু হবে। মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। বর্তমানে এসব মাদ্রাসার শিক্ষকরা কোনো বেতন পান না। তারা সরকার থেকে তিন মাস পর পর নামমাত্র ভাতা পান।