• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কথাবার্তায় কোমলতা পুণ্যের কাজ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২০  

হাসিমুখে, মিষ্টি সুরে কথা বলা, কোমল ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণ করা শুধু পুণ্যের কাজ। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে মলিন মুখে, কর্কশ ভাষায় বিদ্রুপাত্মক আচরণ করা, কথার মাধ্যমে কাউকে আঘাত করা গুনাহের কাজ। বরং মারাত্মক গুনাহ। এটা একজন মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘একজন মুমিন কথাবার্তার মাধ্যমে কাউকে আঘাত দিতে পারে না। অভিসম্পাত করতে পারে না। অশ্লীল ও খারাপ কথা বলতে পারে না।’ (মুসলিম : ২/৩৪২)

কথাবার্তায় কোমলতার ফজিলত : কথাবার্তায় কোমলতা ও নম্রতার অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল ও নম্র। তিনি কোমলতা ও নম্রতা ভালোবাসেন।’ (মুসলিম : ২/৩২২)

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে জিনিসে কোমলতা ও নম্রতা থাকে, সেটাই তার শ্রীবৃদ্ধির কারণ হয়। আর যে জিনিস কোমলতা ও নম্রতামুক্ত হয়, তা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’ (মেশকাত, পৃষ্ঠা : ৪৩১)

কথাবার্তায় কোমলতা ও নম্রতা মানুষের মহৎ চরিত্রের অন্যতম উপাদান। এর দ্বারা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসাও অর্জিত হয়। অতি সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়। অন্যদিকে দুর্ব্যবহার, অসভ্য, রূঢ় ও কর্কশ আচরণ মানুষের নিকৃষ্ট চরিত্রের মারাত্মক উপাদান। এর দ্বারা আল্লাহর ঘৃণা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের লাঞ্ছনা অর্জিত হয়। মানুষের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয় এবং ভালো সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। বন্ধু-বান্ধব কমে যায়।

কোরআনে কোমল আচরণের নির্দেশ : আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে যত নবী পাঠিয়েছেন, সবাই মিষ্ট ও কোমলভাষী ছিলেন। সবার সঙ্গে মুগ্ধতা ছড়ানো খোশ-মেজাজে কথা বলতেন। হোক সে মুসলমান কিংবা কাফির। সবার সঙ্গে কোমল ও নম্র আচরণ করার জন্য তাঁরা ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত। যেমন—পথভ্রষ্ট ফেরাউন ঈমানের আলোকিত পথে আসবে না জেনেও আল্লাহ তাআলা মুসা ও হারুন (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠানোর সময় কোমল ও নম্র আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে—‘তোমরা তার সঙ্গে কথা বলবে কোমলভাবে। ফলে সে কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হতে পারে এবং তার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হতে পারে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৪৪)

বিদ্রুপের জবাবে কোমল আচরণ : গালির জবাবে গালি নয়, বিদ্রুপের জবাবে বিদ্রুপ নয়। বরং সব কিছুর মোকাবেলা করতে হবে উত্তম চরিত্র ও কোমল আচরণে। এর দ্বারা পরস্পরে শত্রুতা মিটে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জবাবে তা-ই বলো, যা উত্কৃষ্ট। তখন দেখবে, তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, সেও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে।’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৪)

নবীদের প্রতি তাঁদের সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিদ্রুপের ঝড় এসেছে। কিন্তু তাঁরা প্রতিশোধ না নিয়ে উত্তম চরিত্র দিয়ে তা মোকাবেলা করেছেন। উন্নত চরিত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যেমন—হুদ (আ.)-এর প্রতি তাঁর সম্প্রদায়ের বিদ্রুপাত্মক আচরণ কোরআনে এভাবে আলোচিত হয়েছে—‘তুমি অথর্ব। তুমি নির্বুদ্ধিতার মাঝে ডুবে আছ। আমরা তো মনে করি তুমি মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৬৬)

এত বড় মানহানিকর কথার পরেও হুদ (আ.) চরিত্রের সর্বোত্তম নমুনা দেখিয়ে কোমলতার সঙ্গে জবাব দিলেন—‘হে আমার জাতি! আমি নির্বোধ নই। আমাকে বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসুল হিসেবে পাঠানো হয়েছে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৬৭)

সুতরাং আমাদের আচরণ হোক নবীদের আচরণের মতো কোমল, নম্র ও মাধুর্যপূর্ণ।