• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কান পাকা রোগ ও এর প্রতিকার

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০১৯  

কানের সচারচর যেসব রোগ দেখা দেয় তার মধ্যে একটি সাধারণ রোগ হচ্ছে কানপাকা রোগ।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি অসাবধনতাবশত কোনো কারনে হয়ে থাকে।বাচ্চাদের এবং অল্প বয়সে এটি বেশি হতে দেখা যায়। 

**কারণঃ 
★আমাদের মধ্য কর্ণ  এবং মুখের মধ্য একটি যোগাযোগ পথ আছে  যার নাম ইউস্টেশিয়ান টিউব। এটির মাধ্যমে মধ্যকর্নে বাতাস এর ভারসাম্য রক্ষা হয়। কোনো কারনে এখানে ফ্লুইড জমলে তখন বাধে বিপত্তি।বাচ্চাদের বেশি হয় তার কারণ বাচ্চাদের কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো, পানি খাওয়ানো ইত্যাদি হয়।এতে করে পানি বা দুধ ওখানে চলে যায় তখন এটি আর ফিরতে পারে না। আসতে আস্তে এটি মধ্যকর্নে জমে থাকে এবং ইনফেকশন এর সৃষ্টি করে।তখন সেখানে পুজ জমে।অতিরিক্ত পুজ হয়ে গেলে কানে ব্যাথা হয় এবং একপর্যায়ে পুজ কানের পর্দা ফেটে কান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে।

★বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আবার যাদের বয়স ৩ বছর বা এর বেশি তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়
এডিনয়েড বলে একটা জিনিস, নাকের পেছনে ন্যাসোফেরিংসে সে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। এই এডিনয়েড যদি দৃষ্টি গোচর না হয়, বাবা-মা যদি খেয়াল না করে, তাহলে দেখা যায় এই এডিনয়েড ফ্যারিংস এর ওপেনিংকে বন্ধ করে দেয়। তখন ইউস্টেশিয়ান টিউবটা পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে না। তখন প্রথম দেখা যায় সেখানে কানের পর্দার পেছনে পানি জমে। সেই পানি জমার কারণে দেখা যায় বাচ্চারা একটু কম শুনতে শুরু করে। কানটা বন্ধ বন্ধ লাগে। যদি ভালোভাবে চিকিৎসা না হয়, যদি নাক- কান- গলা বিশেষজ্ঞের কাছে না যায়, অথবা গেলেও উনি যে পরামর্শটা দিল, সেটা তারা নিল না। একটা সময় দেখা যাবে তীব্র প্রদাহ, সেটা হলো। তারপরও চিকিৎসা হয়তো পুরোপুরি করা হলো না, সেটা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হবে। এরপর কানটা আর ভালো হবে না। 

★ কান পাকা রোগটিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ 
১.সেফ টাইপ (টিউবোটিমপেনিক টাইপ), সাধারণত এটাতে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না।
২.আনসেফ টাইপ (এটিকোএন্ট্রাল টাইপ)
আন সেফ টাইপে ক্রনিক সাপোরটিভ ওটাইটিস মিডিয়ার যে কান পাকা রোগ, সেটি কিন্তু অন্যরকম। সেখানে কিন্তু রোগীর নিঃসরণটা কম থাকে। সেখানে খুব দুর্গন্ধময় নিঃসরণ থাকে। সেখানে একটি জিনিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, পলিস্টিয়েটোমা। পলিস্টিয়েটোমা খুব গুরুত্বপূর্ণ, নাক- কান- গলা বিশেষজ্ঞের কাছে। তার কারণ হলো এই পলিস্টিয়েটোমা হাড়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত করে মধ্যকর্ণের যে প্রদাহ, একে বাড়িয়ে মস্তিষ্কে এটি ছড়িয়ে দেয়। এ থেকে জটিলতা হয়ে রোগী মারা পর্যন্ত যেতে পারে। এমনকি আগে অনেক রোগী মারা যেত এই জটিলতাতে।

**লক্ষণঃ
১)কান দিয়ে পানি/ পুঁজ পড়া। ২) কানে তুলনামূলকভাবে কম শুনা। ৩) মাথা ঘোরানো। ৪) কানে শোঁ শোঁ, ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করা ইত্যাদি। ৪)কানে ব্যাথা করা।

**চিকিৎসাঃ 
কান পাকা রোগ দুইধরণের আগেই বলা হয়েছে 
১)সেইফ টাইপ এরঃ 
এ ক্ষেত্রে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে পুজ পড়ে।ফলে কানে ব্যাথা হয় চুলকায় এবং কানে কম শোনায়।প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ এবং উপদেশ দিয়ে দেয়া হয়।অপারেশন করে কানের পর্দা জোড়া লাগিয়েও সমস্যার সমাধান করা যায়। যদি মধ্য বয়সের হয় তবে দেখে নেয়া হয় তার নাকের হাড় বাঁকা কি না। সে অনুযায়ী, তারপর তাকে বলা হয় আপনি পর্দা লাগিয়ে নিতে পারেন। খুব সহজ একটি অস্ত্রোপচার এটি। কানের পেছনের চামড়া নিয়ে ভেতরে পর্দা তৈরি করে দেওয়া হয়। এটা খুব সফল একটি অস্ত্রোপচার।

২) আনসেফ ভ্যারাইটি হলে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে রোগীকে অপশনের ওপর কখনো ছেড়ে দেয়া যায়  না। যেটা সেফ ভ্যারাইটি, এখানে যদি রোগী বলে যে আমি কানের পর্দা লাগতে চাই না, আমি ওষুধ খেয়ে ভালো থাকব বা আমার কান পাকলে আমি তখন ওষুধ ব্যবহার করব। তখন আমরা তাকে একটি সময় দেয়া হয়। তবে যখন দেখা যায়  কানে একটি পচা গন্ধ আসে, এখানে একটি কোলেস্টেটোমা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। তখন এই কানকে  অবশ্যই মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করাতে বলা হয়।তারপর তদানুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

√√  কানপাকা রোগের প্লাস্টিক সার্জারিঃ( টিম্পানোপ্লাস্টি)টিম্পানোপ্লাস্টি মূলত দুটি অংশ- এর একটি কানের পর্দা জোড়া লাগানো ও অপরটি অস্থি সংযোজন। আর এ কাজ দুটির সফল সমাধানের জন্য মধ্যকর্ণের যাবতীয় রোগজীবাণু নিখুঁতভাবে নির্মূল করা। 

কানের পর্দা জোড়া লাগাতে সাধারণত রোগীর নিজের শরীরের অর্থাৎ কানের পাশ থেকে এক ধরনের পাতলা টিস্যু বা কলা নেয়া হয় যাতে বলে টেম্পোরাল ফাসা। এ ছাড়াও তরুনাস্থি বা তরুনাস্থির পাতলা আবরণ এ কাজে ব্যবহার করা হয়।

কানপাকা রোগের চিকিৎসায় বর্তমান বিশ্বে টিম্পানোপ্লাস্টি অতি পরিচিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। কানপাকা রোগীর কান থেকে পানি বা পুঁজ নির্গত হয়। কানের পর্দায় ছিদ্র থাকে এবং রোগীর শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। ওষুধের দ্বারা অনেকের কান থেকে পুঁজ বা পানি নির্গত বন্ধ হয় বটে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কানের পর্দার ছিদ্র স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং শ্রবণশক্তিও বেশ লোপ পায়। সংকটজনক কানপাকা রোগীর যদি সময়োপযোগী পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত চিকিৎসা করা হয় তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা এ রোগ আর দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগে রূপান্তরিত হতে পারে না। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগ পুঁজ নির্গত একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের কানের পর্দায় ছিদ্র থাকার কারণে মধ্যকর্ণ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে এবং কোনো অবস্থায় পানি বা ঘাম কানের মধ্যে প্রবেশ করলে আবার পুঁজ পড়া আরম্ভ হয়। প্রতিবার প্রদাহে কানের সুক্ষ কলা বা কোষসমূহ ক্ষয় হয়ে অপরিবর্তনশীল অবস্থায় চলে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণশক্তিও লোপ পেতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পথ খুঁজতে শুরু করলেন কিভাবে এ পথকে রুদ্ধ করা যায়। আর তাইতো টিম্পানোপ্লাস্টির আবির্ভাব। টিম্পানোপ্লাস্টি এমন একটি অপারেশন পদ্ধতি যা কিনা মধ্যকর্ণের সব রোগাক্রান্ত কলা বা কোষসমূহ নির্মূল করে যথাসম্ভব পুনরায় সেগুলো পুনঃস্থাপন করে কানের কার্যকারিতা সহনীয় এবং কার্যকরী পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

টিম্পানোপ্লাস্টির কার্যপদ্ধতি ও ফলাফল নির্ভর করে মধ্যকর্ণের অপরিবর্তনশীল রোগের চিকিৎসা ও নির্মূল করার ওপর। এ পদ্ধতির সংযোজনায় যোগ হয়েছে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ। অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ এ কাজের সূক্ষতা বাড়িয়েছে এবং অতি নির্ভুলভাবে রোগীর হারানো কানের পর্দার সফল প্রতিস্থাপন এবং অস্থি সংযোজনের সুযোগ করে দিয়েছে। যার ফলে রোগীর আর কান থেকে পুঁজ বা পানি জাতীয় পদার্থ বের হয় না এবং শ্রবণশক্তি পূর্বের মতো কিংবা কার্যোপযোগী করা সম্ভব হয়। পুঁজ বা পানি জাতীয় পদার্থ নির্গত বন্ধ হলে কানের প্রদাহ থাকে না আর কানের প্রদাহ না থাকলে কানের ভয়াবহ জটিলতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে না।

**প্রতিকারঃ 
১) কান পাকা প্রতিরোধে প্রধান কাজ হলো সর্তক থাকা, যেমন শিশুকে না শুইয়ে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো।

২)সম্ভব হলে শিশুকে ফিডার ছাড়া দুধ খাওয়ানো।

৩)বাচ্চার সর্দি লাগলে সাথে সাথে চিকিৎসা করা।

৪)পুকুর, নদীতে গোসলের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকা।লক্ষ্য রাখা যাতে কোনোভাবেই নাকের মধ্যে পানি না ঢুকে।

৫)সঠিক সময় এর চিকিৎসা না করলে কানের ইনফেকশন ব্রেনে চলে যেতে পারে। তাই কানের সমস্যা হলে শ্রবণ শক্তিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয় অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই সঠিকভাবে কানের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী।