• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কোভিড সর্তকর্তার মধ্যেই ম্যালেরিয়া: যে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক মুখে দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। ভাবছেন এত সাবধান হয়েও কোভিড-১৯ এর হাত এড়ানো গেল না। জ্বর যে শুধুই করোনার কারণে হয় তা নয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম আর প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স জীবাণুর সংক্রমণেও জ্বর হয়। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া। এ রোগের জীবাণুকে আটকে দেওয়া খুব কঠিন নয়। স্রেফ মশারিকে সঙ্গী করে আর মশার বংশ ধ্বংস করতে পারলে ম্যালেরিয়া জ্বরের হাত এড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) হিসেব অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। ভারতের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের (আইসিএইচ) সংক্রামক রোগ চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি জানান, ইতোমধ্যে আইসিএইচ-এ বেশ কিছু শিশুর শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। আইসিইউতে ভর্তি রেখে তাদের সুস্থ করে তোলা হয়।

প্রভাস প্রসূনবাবুর পরামর্শ, টানা জ্বর চলতে থাকলে কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গুর পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া উচিত। ভারতের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক উদয়ন মজুমদার জানালেন, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেশি। তবে অন্য বারের তুলনায় এই বছরে হাসপাতালে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা কম। অন্য বছর এই সময় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। এ বছরে নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে অন্য অসুখ বিসুখকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে করোনা আর ম্যালেরিয়া এক সঙ্গে হয়েছে এমন রোগীও বিরল নয়। এক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা জরুরি।

অন্যান্য জ্বরের সঙ্গে ম্যালেরিয়া জ্বরের যে খুব একটা পার্থক্য আছে তা নয়। ঋতু পরিবর্তনের সময়টায় জ্বর হলে সকলকেই সাবধান হতে হবে। কোভিড ১৯ এর সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিও এই সময়ে অনেক বেশি। এই তিন সংক্রমণের কারণে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গের যথেষ্ট মিল আছে। প্রধান উপসর্গ জ্বর, তাই জ্বর হলে এবং দুই থেকে তিন দিন জ্বর চলতে থাকলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তার দেখান উচিত এমনটি জানান চিকিৎসকরা। 


•  ম্যালেরিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে

•  নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বর আসে এবং চলতেই থাকে

•  শীত শীত ভাব থাকে

•  জ্বর হলে মাথা ব্যথা থাকবেই সঙ্গে গা হাত পা ব্যথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করে

•  বমি ভাব থাকে ও বমি হতে পারে

•  খাবারে অরুচি

•  বুকে ও পেটে ব্যথা হতে পারে

•  কাশি হয় এবং সামগ্রিকভাবে দুর্বল লাগে

অতি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত স্টিফেন জে রজারসন, টিমোথি উইলিয়ম ও তাঁদের সহযোগীদের লেখা এক গবেষণা পত্রে জানা যায়, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করে গত ৫ বছরে এই জীবাণু ঘটিত জ্বরের প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের চিকিৎসা পরিস্থিতি টলমল হয়ে পড়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে শিশু বয়স্ক ও হবু মায়েদের কোভিড-১৯ ও ম্যালেরিয়া এক সঙ্গে হলে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি বাড়ে।

করোনা আবহে রোগ প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়ায় এবং উত্তরবঙ্গের মানুষ ম্যালেরিয়া জ্বরের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত থাকায় ঐ অঞ্চলে ম্যালেরিয়া কোভিড এর সাঁড়াশি আক্রমণ খুব একটা কাবু করতে পারেনি সাধারণ মানুষকে। তবে কোনও অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাওয়া ঠিক নয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি থাকে। হৃদরোগীদের এই ওষুধ দেওয়া হয় না। প্রভাস প্রসূন গিরির মতে করোনাই হোক বা ম্যালেরিয়া এখনকার অতিমারি পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোনও পরিস্থিতিতেই নিজেরা ওষুধ খাবেন না বলে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম জীবাণুর সংক্রমণ হলে অনেক সময় জ্বর মাথা ব্যথার মত উপসর্গের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম), লিভার, কিডনিসহ নানা অঙ্গের কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হতে পারে।

বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে বয়স্কদের কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস বা হৃদরোগ থাকলে ম্যালেরিয়া বা কোনও জ্বর মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ম্যালেরিয়া ডেঙ্গুসহ যে কোনও মশাবাহিত অসুখ আটকে দেওয়ার একমাত্র উপায় মশা বিনাশ করা আর মশারিকে সঙ্গী করা। বাড়ি বা আশেপাশে বৃষ্টির পানি জমতে দেওয়া চলবে না। পাড়ার নর্দমা ও জলাশয় জাতীয় জায়গার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনসচেতনতাই পারে জীবাণুবাহী অসুখ আটকে দিতে। দেবী পক্ষে সচেতনতাই হোক প্রত্যেকের অঙ্গীকার।