• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কোরআনের বিস্ময়কর তথ্য.. যে কারণে উট জীবিত সাপ খায়

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২০  

পবিত্র কোরআনের এমন একটি আশ্চর্য ঘটনা আছে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা, সূরা ওয়াকিয়ার ৫২-৫৫ নম্বর আয়াতে পৃথিবীর অন্যতম একটি প্রাণী তথা মরুভূমির জাহাজ খ্যাত উটের একটি রোগের বর্ণনা করেছেন। যে রোগটি হলে উটকে বাধ্যতামূলক রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিষাক্ত সাপকে জীবিত গিলে খেতে হয়। 

এখানেই শেষ নয়, আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে সে জীবিত বিষাক্ত সাপ পুরো গিলে খাওয়ার পর উটের চোখ দিয়ে যে পানি বের হয়, সে পানি আবার সাপের বিষ নামানোর জন্য মানুষের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) শুধু মানবজাতির হকসমূহ বয়ান করেননি বরং পশু, পাখির হকসমূহও বয়ান করেছেন।

এদের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য বর্ণনা করার জন্য একটি কথাই যথেষ্ট যে, কোরআন পাকে বিভিন্ন জায়গায় প্রাণীজগতের বর্ণনা এসেছে। শুধু তাই নয়, কোরআন কয়েকটি সূরার নামও রাখা হয়েছে পশু পাখির নামে। যেমন-

> সূরা বাকারা। এর অর্থ গাভী গরু।
> সূরা আনআম। এর অর্থ চতুস্পদ জন্তু।
> সূরা নহল। এর অর্থ মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা।
> সূরা নমল। এর অর্থ পিঁপড়া।
> সূরা আনকাবুত। এর অর্থ মাকড়সা। 
> সূরা ফিল। এর অর্থ হাতি।

হাতির নামে সূরা (সূরা ফিল) কোরআন পাকে রয়েছে। তেমনি ভাবে সূরা ইউসুফে উটের আলোচনা আছে। উট এমন এক প্রাণী যেটির বৈশিষ্ট্য  অন্যান্য প্রাণী থেকে ভিন্ন ও অদ্ভুত।

পবিত্র কোরআনে উটের একটি রোগের আলোচনা আছে, যে রোগ হলে উট একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উট শুধু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। আশ্চর্যের বিষয় অদ্ভুত বিচিত্র ও রহস্যময় এই রোগটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে কোনো উৎস বা কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি। উটের এ রোগের নাম হলো হায়াম। বিজ্ঞরা বলেন হায়াম মানে হলো সাপকে জীবিত গিলে ফেলা। অনেকে আবার এ বিষয়ে না জেনেই উটের ওপর নানা ধরনের জুলুম করা শুরু করে দেয়।

আল্লাহ তায়ালা উটের হায়াম নামক এ রোগের শেফা রেখেছে জীবিত সাপকে গিলে ফেলার মাধ্যমে। তাও হতে হবে কিং কোবরা অথবা ভয়ঙ্কর পাইথন এর মতো বিষাক্ত সাপ। এ চিকিৎসা দেয়ার সময় উটের চোখ থেকে যে পানি বের হয় তাও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য খুবই উপকারী পানি। কেননা সাপ গিলে ফেলার পর উটের তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এবং ৮ ঘন্টা এ অবস্থায় থাকার পর সাপের বিষের কারণে উটের চোখ থেকে পানি অঝোর ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে।

অনেক সময় উট নিজ থেকেই সাপ খেয়ে ফেলে যার কারণে উটের প্রচণ্ড তৃষ্ণা হয়। এবং উটের চোখ থেকে পানি বের হতে থাকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই পানির ব্যাপারে গবেষকরা বলেন যে, উটের এ চোখের পানি অত্যন্ত মূল্যবান পানি। এই পানি এতো গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেক উটের মালিক এ পানিকে বিভিন্ন ভাবে সংরক্ষণ করেন। প্রাচীনকালে বিজ্ঞ লোকেরা ছোট চামড়ার থলেতে সংরক্ষন করে রাখতেন। কেননা এ পানি অন্য পানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ চোখের পানিকে তিরয়াক বলা হয়।

আর তিরয়াক এমন এক ওষুধ যা যেকোনো প্রাণীর বিষকে নষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয়। আর এটি মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন এই উটের চোখের পানি আবার আপনার জন্য উপশম হিসেবে কাজ করবে। কখনো যদি আপনাকে সাপ বা ভয়ঙ্কর বিষাক্ত বিচ্ছু কোনো কিছু ছোবল দিয়ে থাকে। তাহলে সেই বিষক্রিয়া ধ্বংস করার জন্য সেই উটের চোখের পানি সেবন করতে হবে।

উটের পিপাসার এই রোগটিকে কোরআন মাজিদে জাহান্নামীদের শাস্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যার অর্থ কিছুটা এমন,  অতঃপর তার ওপর গরম পানি টগবগ করতে থাকবে আর পানকারী পিপাসায় উটের মতো পানি পান করবে। সুবাহানাল্লাহ!

তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে, অতঃপর তার ওপর পান করবে উত্তপ্ত পানি। পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়। এখানে সেই পিপাসিত উটের কথা বলা হয়েছে, যে পিপাসিত উট বিষাক্ত সাপ খাওয়ার পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে এত দ্রুত বেগে পানি খায় যেন মনে হয় এক নদী পানি ও তার  পিপাসা মিটবে না। সাপের বিষে বিষাক্ত উটের পেট এতো বেশি জ্বালাপোড়া করে। আর সে জ্বালাপোড়ায় সে পানি পান করতে থাকে। আর জাহান্নামীরা টগবগ করে সিদ্ধ হতে থাকা পানি পান করতে থাকবে। সে পানি এতই গরম যা তাদের মুখের সামনে আনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চেহারার গোশত গলে পড়বে। তবুও তারা এক শ্বাসে সে পানি পান করবে। আর তা তাদের পেটের সব আতুরি কেটে পেছনের রাস্তায় বের করে দেবে।

এজন্যই আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) এক শ্বাসে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। এরশাদ করেন, উটের মতো এক শ্বাসে পানি পান করিও না বরং তিন শ্বাসে পানি পান কর।

ইয়া রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা! আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রত্যেকটি ছোট বড় সুন্নত আমলগুলো যথাযতভাবে পালন করার তাওফিক দান করুক। আমিন।