• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উন্নতদেশগুলোকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২১  

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রী শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে ‘১৩তম বার্লিন কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে’ এ আহ্বান জানান। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (বিএমইএল) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চুয়ালি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক করোনা মোকাবিলায় কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সফল হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের কৃষির উন্নয়ন, এগ্রো-প্রসেসিং, কৃষিযান্ত্রিকীকরণ ও ফুড ভ্যালু চেইন শক্তিশালী করতে উন্নত দেশগুলোকে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এগিয়ে আসতে হবে।’

খাদ্যসংকটের ব্যাপারে ‘আগাম কার্যকর সতর্কব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাব্য খাদ্যসংকটের ব্যাপারে ‘আন্তর্জাতিক কার্যকর সতর্কব্যবস্থা’ গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে করে আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। এছাড়া ফুড সিস্টেম তথা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত ও মজুতে মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতেও উন্নত দেশের আরও সহযোগিতা দরকার।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেজন্য জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রেও উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার জুলিয়া ক্লোকনার। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নবিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুসজ উজসিচোস্কি প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

জার্মান সরকারের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী (১৮-২২ জানুয়ারি) ১৩তম ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (জিএফএফএ)’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কীভাবে বিশ্বকে খাওয়ানো যায়’ এই শিরোনামে কৃষি-খাদ্যবিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সম্মেলনে ৯০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে।

গত ৫ দিনে বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ একটি ‘যৌথ ইশতেহার (কমিউনিক)’ প্রস্তুত করেছে। ‘কৃষিমন্ত্রীদের কনফারেন্সে’ তিনটি বিষয়কে এবারের ‘যৌথ ঘোষণায়/ইশতেহারে’ গুরুত্ব দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

প্রথমটি হচ্ছে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে জার্মান কৃষিমন্ত্রী জুলিয়া ক্লোকনার জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর আগেই বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৯ কোটি (৬৯০ মিলিয়ন)। শতকরা হিসেবে যা বিশ্বজনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ। করোনাকালে খাদ্য সরবরাহ ও বাজার স্থিতিশীল থাকলেও অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বেকারত্ব ও আয় হারিয়ে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিদ্যমান এই বিশাল ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে গত এক বছরে আরও ১৩ কোটি ক্ষুধার্তমুখ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে ৫ বছরের নিচের আরও ৭০ লাখ শিশু ‘চরম অপুষ্টির’ শিকার হয়েছে।

দ্বিতীয়টি হলো— ভবিষ্যতে মহামারি থেকে দূরে থাকতে ‘ওয়ান হেলথ এপ্রোচ’ গ্রহণ। জানানো হয়, বিগত ৩০ বছরে মানুষের নতুন সংক্রামণব্যাধিতে আক্রান্তের ৭০ ভাগ এর উৎস প্রাণি। প্রাণি থেকে মানুষে সংক্রমিত এসব রোগের বিরুদ্ধে সবাইকে দূরে থাকতে হলে ‘ওয়ান হেলথ এপ্রোচ’ গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষ, প্রাণি ও পরিবেশের মিথষ্ক্রিয়াকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। সেজন্য এবারের সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং প্রাণিস্বাস্থ্যের বিশ্ব সংস্থা (OIE) এর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার এবং প্রাণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বন্যপ্রাণির ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

শেষটি হলো— জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা।