• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

গোপনে গোপনে ফোন কী শোনে?

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯  

অনেকে বিশ্বাস করেন ব্যবহারকারীদের ফোনালাপ শুনে থাকে ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। সেটা কি আসলেই সত্যি, নাকি মিথ্যা? সেটা নিয়ে গবেষণা করেছে মোবাইলের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের গবেষণায় কী কী উঠে এলো? 

বহুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, গুগলের মতো বড় টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠছিল। অভিযোগে, স্ট্যাটাসে, ভিডিওতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়েছিল সয়লাব। ফোনের সামনে বেশ কিছুক্ষণ এক বিষয় নিয়ে কথা বলার পর সে বিষয়েরই বিজ্ঞাপন দেখার প্রমাণ দেখিয়ে বানানো ভিডিওগুলো ছিল বেশ আলোচিত। যে জিনিস নিয়ে ব্যবহারকারী আগ্রহ দেখিয়েছেন সেটার বিজ্ঞাপনই কেন দেখা যাবে? এ প্রশ্নই সন্দেহের উদ্রেক করছিল মোবাইলের মাইক্রোফোন এবং এর সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রক টেক জায়ান্টগুলোর দিকে। তাই মোবাইল নিরাপত্তা সলিউশনস কম্পানি ওয়ান্ডেরার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি আমলে নিয়ে তার ময়নাতদন্ত করতে কোমর বেঁধে নামলেন। কী পাওয়া গেল সেই তদন্তে?

শুরু হলো পরীক্ষা!
গবেষকরা প্রথমে একটি স্যামসাং ফোন এবং একটি আইফোন নিয়ে এক রুমে রেখে দেন। আধাঘণ্টা ধরে মোবাইল দুটিকে টোপ হিসেবে কুকুর-বিড়ালের খাবারের বিজ্ঞপ্তি শোনানো হয়। তারা একই রকম দুটি ফোনকে একটি শব্দহীন রুমে রেখে দেন। শুধু তা-ই না, তাঁরা ফোনগুলোতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ক্রোম, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব ও অ্যামাজন অ্যাপকে ফোনের তথ্য ব্যবহারের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে সম্পূর্ণরূপে খোলা রাখেন। এরপর শুরু হয় পর্যবেক্ষণ। তাঁরা তন্ন তন্ন করে সব প্ল্যাটফর্ম ও ওয়েব পেজে কুকুর-বিড়ালের খাবার সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন খোঁজেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা প্রতিটি অ্যাপের ব্যাটারি ও ডাটা ব্যবহারও পর্যবেক্ষণ করেন। একই কাজ তাঁরা টানা তিন দিন চালিয়ে যান।

কী পাওয়া গেল?
পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে, অডিও ও শব্দহীন উভয় ঘরেই ফোনের কার্যকলাপ প্রায় একই রকম। অ্যাপ্লিকেশনগুলো ডিভাইসের ডাটা রেকর্ড করলেও সেটা ছিল খুব নগণ্য। আর সেটা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি, হেই গুগলের কাজের সঙ্গে তুলনা করলে তার ধারেকাছেও নেই। পর্যবেক্ষণে অডিও রুমের ফোন দুটিতে কোনো প্রাসঙ্গিক অ্যাডভার্ট পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া কথা রেকর্ড করলে ফোনের ব্যাটারি বেশি খরচ হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষায় তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

তাঁদের পুরো পরীক্ষা নিয়ে বিবিসি অতি সম্প্রতি একটি সংবাদ করেছে। তা দেখতে চলে যেতে পারেন এই লিংকে : https://www.youtube. com/watch?v=KGjHajL29S0

বিশেষজ্ঞরা কী বলেন?
ওয়ান্ডেরার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার জেমস মার্ক বিবিসিকে বলেন, ‘লক্ষ করেছি আমাদের পরীক্ষায় মোবাইলে যে পরিমাণ ডাটা ব্যবহৃত হয়েছে তা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের দ্বারা ব্যবহৃত ডাটার চেয়ে খুব কম। তার মানে যে অ্যাপগুলোকে পরীক্ষা করা হয়েছে তারা কেউই পুরো সময় ধরে কথাবার্তা রেকর্ড করা এবং সেটা ক্লাউডে আপলোড করার মতো অবস্থায় ছিল না। যদি অ্যাপগুলো এ কাজ করত, তবে তাদের ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টগুলোর সমতুল্য হতো।’

সিকিউরিটি সলিউশনস কম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এল্ডার টুভে তাঁদের পরীক্ষার ফলাফলে খুবই আত্মবিশ্বাসী। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যে প্ল্যাটফর্মগুলো পরীক্ষা করেছি সেগুলোতে ফোনের আড়ি পাতার বিন্দুমাত্র প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

তাহলে ঘরের কথা পরে জানে কিভাবে?
আসলে টেক জায়ান্টগুলো আমাদের সম্পর্কে এত তথ্য রাখে যে টার্গেটেড অ্যাডভার্ট পাঠানোর জন্য আমাদের কথাবার্তা শোনার কোনো প্রয়োজনই তাদের নেই।

ব্যবহারকারীর লোকেশন ডাটা, ব্রাউজিং হিস্টরি ও ট্র্যাকিং পিক্সেল তার আগ্রহের পণ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য যথেষ্ট। ব্যবহারকারী কোন কোন ফেসবুক পোস্টে লাইক দিচ্ছেন, শেয়ার করছেন, কোন পোস্ট বেশি সময় ধরে দেখছেন, কোন নোটিফিকেশন দেখার সঙ্গে সঙ্গেই ক্লিক করছেন—এসব বিশ্লেষণ করে তারা ব্যবহারকারীর আগ্রহের বিষয়গুলো ধরে ফেলে।

শুধু তা-ই না, ব্যবহারকারী বন্ধুরা যেসবে আগ্রহী তা যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে তাঁর পছন্দের বিষয় সম্পর্কে অনুমান করে ফেলা তাদের পক্ষে কোনো ব্যাপারই নয়।  ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের মোবাইল অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপার্ট সোটেরিস ডেমেট্রিও বলেন, ‘যে অ্যাডভার্টগুলো দেখা যায় সেগুলো ব্যবহারকারী সম্পর্কে যে বিপুল পরিমাণ তথ্য কম্পানির কাছে জমা আছে তার ফলাফল। খুবই শক্তিশালী মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমেই এটা ঘটে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারা এখন ব্যবহারকারীর কোনো কিছু করার আগেই কিসে সে আগ্রহী হতে পারে তা বুঝে ফেলতে সক্ষম।’