• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জেল হত্যায় জিয়ার প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশের ইতিহাসে পঁচাত্তরের পর সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যার ঘটনায় তৎকালীণ সেনাবাহিনীর উপ প্রধানের দায়িত্বে থাকা জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিলো বলে মনে করেন ওই ঘটনায় শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।

কমিশন গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করলে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে দাবি করে তিনি বলেন, একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই হত্যার নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

“এটা যদি কমিশনের মাধ্যমে বের করা যায় দেখা যাবে এতে তার (জিয়াউর রহমান) প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিলো। কারন যারা একটা খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যারা এসেছে, তারা কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিলো। না হলে কেন খুনিদের দ্বারা ক্ষমতায় বসলো। যখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোস্তাক ক্ষমতা দখল করলো প্রথম চয়েসই ছিলো জিয়ার রহমান। তখন তিনি সেনা বাহিনীর উপ প্রধান ছিলেন। আমি মনে করি জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারী। প্রত্যক্ষভাবে জেল হত্যায়ও তার সহায়তা ছিল আমি বিশ্বাস করি”, বলেন নাসিম

শনিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজের বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে জেলে হত্যার বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রবীন এই নেতা।

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় এই দিনটি (৩ নভেম্বর)। ১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান ও অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বঙ্গবন্ধুর চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘চার জাতীয় নেতা ছিলেন এমন নেতা যারা দেশের প্রয়োজনে প্রতিটি সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সফল ভূমিকা রেখেছিলেন। একাত্তরে যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, বঙ্গবন্ধু তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত চার সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন কিভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে হবে। 

চার জাতীয় নেতা মুজিবনগর সরকার গঠন করে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন। তাদের অপরাজেয় নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম সফল হয়েছে। বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান মোস্তাকও সেই সময় ছিলেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের সহচর ছিলেন। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো এই, যে মোস্তাকের উচ্চভিলাসের কারনে এমনটা হয়েছিল।

একাত্তরেও সেই মোস্তাক স্লোগান দিয়েছিল যে, তোমরা জীবিত মুজিব চাও না স্বাধীনতা চাও। কিন্তু জাতীয় চার নেতা বলেছিলেন, আমরা জীবিত মুজিবও চাই, স্বাধীনতাও চাই। সেই সময়ই কিন্তু তারা মোস্তাককে সরিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কারিগর ছিলেন এই চার জাতীয় নেতা।

এই যে মোস্তাকের প্রতিহিংসা ও উচ্চাভিলাস এই কারণেই ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। তারপর জাতীয় চার নেতাকে বলা হয়েছিল যে আপনারা হয় আমার সঙ্গে হাত মেলান, না হলে জীবন দিতে হবে। কিন্তু জাতীয় চার নেতা সে দিন কারাবন্দি অবস্থায় জীবন দিয়েছেন, তবুও আত্মসর্মপণ করেন নি।

এটা ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ড। দুনিয়ার বিরল ঘটনা যে চার জন শীর্ষ নেতাকে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। আমি মনে করি যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড কিংবা জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড একই সুত্রে গাঁথা। যখন কারাবন্দি অবস্থায় নেতাদের হত্যা করা হয়, তখন আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতারাও বন্দি ছিল। কিন্তু বেছে বেছে চার জনকেই হত্যা করা হয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর খুনিরা জানতো আর যাই হোক এই জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করবে না। 

জাতীয় চার নেতার বিচার নিয়ে ক্যাপ্টের মনসুর আলীর ছেলে ও বর্তমান আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, আমরা যে দীর্ঘ প্রলম্বিত এই বিচারটি করলাম, এই বিচারটি ছিল একটি কঠিন লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে মোস্তাক, জিয়াউর রহমান, তারপরে এরশাদ ও খালেদা জিয়া পর্যন্ত বিচার দীর্ঘায়িত করেছে। খুনিদের তারা আশ্রয় ও প্রস্রয় দিয়েছে। সমস্ত অপরাধ থেকে তাদের দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই বিচারটি করেছি।

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকারিরা একই। বিএনপি-জামায়াতের সময় আমি নিজে খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছি। অনেক রাজনৈতিক নেতারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। অনেক রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানি ছিল। যারা চেয়েছিল জাতীয় চার নেতাকে কোনভাবে মোস্তাক সরকারে আনা যায় কি না। আমি দেখেছি, কিভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনের পর আব্বাকে চেষ্টা করেছে, মোস্তাক সরকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যখন নিতে পারে নি তখন গ্রেপ্তার করে মোস্তাকের কাছে নিয়ে গেছে। আমার পিতা মোস্তাকের সামনে অস্বীকার করেছেন তাদের সাথে হাত মেলাতে। তারপর তো এই চার জনকে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপির সরকারের শাসনামলে জেল হত্যার বিচার প্রভাবিত করা হয়েছে উল্লেখ করে নাসিম বলেন, ‘যখন রায় ঘোষণা হবে ট্রায়াল কোর্টে ঠিক রায় দেয়ার আগে বিচারক বদল করেছিলেন ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ সাহেব। উনি তো এখন বড় বড় কথা বলেন, ন্যায়বিচারের কথা বলেন। উনাকে জিজ্ঞেসা করবেন কখনো সুযোগ পেলে আপনি তো আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় রায় দেয়ার আগে বিচারক পরিবর্তন করলেন কেন? তার ফলশ্রুতিতে এই সমস্ত লোক যাদের নাম আমি বললাম, এরা কিন্তু খালাস পেয়ে গেলেন। এমনকি হাইকোর্টে পর্যন্ত প্রমাণিত করে তারা রায় দিয়েছিল যে, ১জন খুনিই নাকি জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করেছে।’

কমিশন গঠনের মাধ্যমে জেল হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ খুনিদের বিচার করেছি। এখন প্রয়োজন হবে একটি কমিশনের মাধ্যমে এই হত্যার যারা নেপথ্যে ছিল, যারা খুনিদের পদোন্নতি দিয়েছে এদেরকে জবাবদিহিতায় আনা। না হলে কিন্তু এই ঘটনা পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটতে পারে।

কমিশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩রা নভেম্বরের জেল হত্যার জন্য একটা কমিশন করে দেখা যেতে পারে যে, কারা এর পেছনে ছিল। কারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’

ইতিহাসের প্রয়োজনে জেল হত্যার তদন্ত করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখনই সময়। যে সময়টিতে এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যের বিষয় বের করা সম্ভব। অনেক ঘটনা আছে, অনেকে অনেক জায়গায় ছিল, এখনও আছে। এ ঘটনার যদি তদন্ত করে দেখা যায়, তবে অনেকেই তখন এদের আশ্রয় দিতে দায়িত্ব পালন করেছে। এমনকি এমন আছে যারা খুনিদের বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সাহায্য করেছে। বিএনপির সময় অনেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছে, অনেকে জীবিত আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমি মনে করি জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারী। প্রত্যক্ষভাবে জেল হত্যায়ও তার সহায়তা ছিল আমি বিশ্বাস করি। এটা যদি কমিশনের মাধ্যমে বের করা যায় দেখা যাবে এতে তার প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিলো। কারন যারা একটা খূনের মাধ্যমে ক্ষশতায় যারা এসেছে তারা কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিলো। না হলে কেন খুনিদের দ্বারা  ক্ষমতায় বসলো। প্রথম চয়েসই ছিলো জিয়াউর রহমান। যখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোস্তাক ক্ষমতা দখল করলো প্রথম চয়েসই ছিলো জিয়াউর রহমান। তখন তিনি সেনা বাহিনীর উপ প্রধান ছিলেন। এরশাদ সাহেব, খালেদা জিয়া এসব খুনিদের আশ্যয় প্রশ্রয় দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত বানিয়েছে। ইন্ডেমনিটি দিয়ে বিচার থেকে দুরে রেখেছে।’