• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

‘জ্যোতিষশাস্ত্র ও রাশিফল’ ইসলাম যা বলে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

জ্যোতিষশাস্ত্র প্রধাণত ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যারা এই বিদ্যা চর্চা করে তাদের জ্যোতিষী বা গণক বলে গণ্য করা হয়। ‘পার্থিব বিষয়াদি জ্যোতিষ্কমণ্ডলী দ্বারা প্রভাবান্বিত এবং এদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যত ঘটনাবলী আগাম বলা সম্ভব।’ এই বিশ্বাসই জ্যোতিষশাস্ত্র নামে পরিচিত।

ইসলামে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা শুধু হারামই নয় একজন জ্যোতিষবিদের কাছে যাওয়া এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী শোনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর বই কেনা অথবা কোষ্ঠী যাচাই করা- সবই পরিপূর্ণ নিষিদ্ধ।

আকিদার ত্রুটির কারণেই মুসলিমদের মাঝে বিচিত্র ধরনের শিরক ও বিদাত ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাশিচক্রে বিশ্বাস। যে ব্যক্তি তার রাশিচক্র জানতে চায় সে হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিম্নোক্ত হাদিসের অধীনে পড়ে-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে গণকের কাছে যায় এবং কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার চল্লিশ দিন ও রাত্রির নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (সহিহ মুসলিম-৫৫৪০)।

এমনকী জ্যোতিষের বক্তব্যের সত্যতায় সন্দিহান হওয়া সত্ত্বেও শুধু তার কাছে যাওয়া এবং প্রশ্ন করার শাস্তি এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ জ্যোতিষ-সংক্রান্ত তথ্যাদির সত্য মিথ্যায় সন্দিহান হয়, তবে সে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যরাও হয়ত অদৃশ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানে বলে সন্দেহ পোষণ করে। এটাও স্পষ্টতই শিরক।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্য জগতের সমস্ত জ্ঞানের চাবি। যা তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। (সূরা: আন-আনআম, আয়াত: ৫৯)।

‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।’ (সূরা: আন-নামল, আয়াত: ৬৫)।

যতই জ্যোতিষ বলুক অথবা যা কিছুই জ্যোতিষশাস্ত্রের বইয়ে থাকুক, কেউ তার রাশিচক্রে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করলে সে কুফরির গুনাহ করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ গণকের নিকট গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, মুহাম্মাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছিল সে তা অস্বীকার করল।’ (সুনানে আবু দাউদ-৩৮৯৫)।

পূর্বে বর্ণিত হাদিসের মতো এই হাদিসে শাব্দিকভাবে গণকের সম্বন্ধে উল্লেখ করা হলেও জ্যোতিষবিদদের জন্যেও সমভাবে প্রযোজ্য। উভয়ই ভবিষ্যতের জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করে।

জ্যোতিষবিদদের দাবি সাধারণ গণকদের একত্ববাদের বিরোধিতা করার মতো। সে দাবি করে যে মানুষের ব্যক্তিত্ব নক্ষত্র দ্বারা নিরুপিত এবং তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড এবং তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী নক্ষত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সাধারণ গণক দাবি করে যে একটি কাপের তলায় চায়ের পাতায় গঠন অথবা হাতের তালুর রেখা একই বিষয় বলে। উভয় ক্ষেত্রে তারা সৃষ্ট বস্তুর বাস্তব বিন্যাসের মধ্যে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতার দাবি করে।

জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস এবং রাশিচক্র পরীক্ষা করা পরিস্কারভাবে ইসলামের শিক্ষা এবং বিশ্বাসের পরিপন্থী। সে আত্মাই প্রকৃতপক্ষে নি:স্ব, যা বিশুদ্ধ ঈমানের (বিশ্বাসের) স্বাদ গ্রহণ করেনি এবং এ সকল পথ খুঁজে বেড়ায়। অপরিহার্যভাবে, এ সব পথ পূর্বনির্ধারিত নিয়ত হতে মুক্তি পাবার একটি নিষ্ফল প্রচেষ্টাই কেবল। 

অজ্ঞ লোকেরা মনে করে যে তারা যদি জানে আগামীকাল তাদের ভাগ্যে কী রয়েছে, তারা আজ থেকে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। ওইভাবে তারা অমঙ্গল এড়াতে সক্ষম হতে পারে এবং মঙ্গল নিশ্চিত করতে পারে।

তথাপি, আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল (সা.)-কে বলেন, ‘বল, আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভালো মন্দের ওপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমিতো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সর্তককারী ও সুসংবাদবাহী।” (সূরা আ’রাফ-১৮৮)।

সুতরাং, প্রকৃত মুসলমান এই সব ক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে থাকতে নৈতিকভাবে বাধ্য। একইভাবে আংটি, গলার হার ইত্যাদির ওপর যদি রাশিচক্রের চিহৃ থাকে তবে তা গলায় বা আঙ্গুলে পরা উচিত নয়, এমনকী কেউ এর ওপর বিশ্বাস না করলেও। এটি একটি বানোয়াট পদ্ধতির অংশ যা কুফর বিস্তার করে এবং একে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা উচিত। কোনো বিশ্বাসী মুসলমানের রাশিচক্র কী তা জিজ্ঞাসা করা অথবা তার প্রতীক অনুমান করার চেষ্টা করাও উচিত নয়।

খবরের কাগজের রাশিচক্রের কলাম পড়া অথবা পড়তে শোনাও অনুচিত। যে মুসলমান তার কার্যক্রম নির্ধারণ করতে জ্যোতিষতত্ত্ব সম্বন্ধীয় পূর্বাভাস ব্যবহার করে, তার উচিত আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা (তওবা) করা। 

মহান রাব্বুর আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ভয়ংকরতম শিরক এবং কুফর থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমিন।