• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রেও মেগা প্রকল্পে এগিয়ে দেশ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি ২০২১  

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের তিন মেগা প্রকল্পের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য এরইমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়েছে। প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউসকুপার্সকে (পিডাব্লিউসি) চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পিডাব্লিউসি জানাবে বাংলাদেশের কি ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে (সি-মি-উই-৬) যুক্ত হওয়ার পথে কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে চলমান প্রকল্প আইএমইআই ও এনইআইআর ডাটাবেজ চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে এ বছরই।

জানা যায়, শিগগিরই বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডাব্লিউসি’র নাম ঘোষণা করা হবে। সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামে চুক্তি সই করলে বাংলাদেশ পাবে ১২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ। আর ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ কাজ শেষ হবে এনইআইআর প্রকল্পের। মার্চ মাস নাগাদ এটি চালু হলে বৈধ বা অবৈধ মোবাইল চিহ্নিত করা যাবে এবং মোবাইলভিত্তিক অপরাধ কমবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এ বছরে আমরা তিনটা বড় কাজে হাত দিয়েছি। আশা করি সফল হতে পারবো। প্রথমেই তিনি বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নিয়ে বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিক নির্দেশনা দেওয়া একটি প্রকল্প। এখন মূল বিষয় হলো কী ধরনের স্যাটেলাইট আমাদের প্রয়োজন, সেটি। প্রথমটি যেহেতু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, ফলে আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, যেটা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়- সেটাই যেন সাজেস্ট করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশ কৃষিভিত্তিক। ফলে আমাদের একটি ওয়েদার স্যাটেলাইট খুবই প্রয়োজন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে এসব কথা বলা হয়েছে। তিনি জানান, প্রথম স্যাটেলাইটটির আয়ু ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু হস্তান্তরের সময় জানানো হয়েছে ১৮ বছর। সে হিসেবে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ওটা থেকে সেবা পাওয়া যাবে। যেহেতু দ্বিতীয় স্যাটেলাইট প্রথমটির বিকল্প হবে না তাই কমিউনিকেশনের কিছু পার্ট দ্বিতীয় স্যাটেলাইটে রাখা হবে যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।

দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট

এই সরকারের মেয়াদেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। এরইমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। প্যারিসভিত্তিক বিখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউসকুপারস-কে (পিডাব্লিউসি) চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, আশা করি ৩ বা ৪ জানুয়ারি আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, পিডাব্লিউসি আমাদের জানাবে এবার বাংলাদেশের কী ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে। কমিউনিকেশন বা অবজারভেটরি যে ধরনের স্যাটেলাইটের জন্যই পরামর্শ দিক আমরা সেটি নিয়ে কাজ করবো। তিনি জানান, বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এই মেয়াদেই তা করা হবে। খুশির খবর হচ্ছে ২০২১ সাল থেকেই তার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ হলো কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বর্তমান কক্ষপথটি কেনা হয়। ২০১৮ সালের ১১ মে এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ তৈরি, উৎক্ষেপণ ইত্যাদিতে খরচ হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

সাবমেরিন ক্যাবল-৩

সাবমেরিন ক্যাবল-৩ (সি-মি-উই-৬) কনসোর্টিয়ামে যোগ দিতে এরই মধ্যে সরকার সম্মতিও দিয়েছে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ ১২ টিবিপিএস (টেরাবাইটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাবে। ৬ টিবিপিএস সিঙ্গাপুর প্রান্তে, অবশিষ্ট ৬ টিবিপিএস ফ্রান্স প্রান্তে থাকবে। একইসঙ্গে চালু থাকবে সি-মি-উই-ফাইভ। সি-মি-উই-ফোরও সচল থাকতে পারে সে সময়। ফলে দেশে কোনও ব্যান্ডউইথের ঘাটতি তো থাকবেই না। বরং প্রচুর ব্যান্ডউইথ তখন উদ্বৃত্ত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ রফতানি করেই প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই প্রকল্পে আমরা আগেই সম্মতি দিয়েছি। এখন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি হতে বাকি। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে মন্ত্রী আশাবাদী। মন্ত্রী জানান, তৃতীয় সাবমেরিন নির্মাণ (কনসোর্টিয়াম) করতে হুয়াওয়ে ২০ মিলিয়ন ডলার কম দর প্রস্তাব করেছে। কিন্তু বাগড়া দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে কাজ দিতে দেবে না। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি, ঠিক আছে- ২০ মিলিয়ন ডলার কমে যে কাজ করে দেবে তাকে আমরা কাজ দেব। তোমার দেশের কাউকে করে দিতে বলো। বিষয়টি এখন এই অবস্থায় আছে। আশা করি জানুয়ারির মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

এটি ৬৯১ কোটি টাকার প্রকল্প উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে বাংলাদেশ ১২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। এরমধ্যে ৬ টেরা ইউরোপ অঞ্চলে এবং ৬ টেরা সিঙ্গাপুরভিত্তিক এলাকার জন্য পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে বাংলাদেশের খরচ হয় প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে দেশের খরচ হয় ৬১০ কোটি টাকা।
আইএমইআই ও এনইআইআর ডাটাবেজ

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এটি চালু হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আশাবাদী। অন্যদিকে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) ডাটাবেজ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য মোবাইলফোন আমদানিকারক ও মোবাইল ফোন অপারেটররা উদ্যোগী হয়েছে।

দেশের সব মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর এতে সংরক্ষণ করা হবে। ফলে মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই এবং মোবাইল ফোন কেন্দ্রিক অপরাধ কমবে। চুরি হওয়া সেট চালু হবে না বা ছিনতাই হলে সেট লক করে দেওয়ারও সুযোগ থাকবে। এছাড়া এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে ফোনটি বৈধ বা অবৈধ তা যাচাই করা যাবে। এর ফলে চ্যানেল প্রোডাক্ট দেশে প্রবেশ করবে। গ্রে মার্কেটে (অবৈধ পথে) পণ্য প্রবেশ কমবে।

এনইআইআর প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এই সিস্টেম বসানোর জন্য সিনেসিস আইটি কাজ পেয়েছে। কাজ শেষ হতে ফেব্রুয়ারি মাস ক্রস করবে না। স্বাধীনতার মাসে আমরা এটি চালুর বিষয়ে আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরির কাজ যার তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিলো তিনি আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে ফিরে এসেছেন। ফলে আমরা আরও আশাবাদী যে কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।