• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

তিন কুল: প্রত্যেক বস্তুর বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট (পর্ব-৪)

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২০  


 

আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। (ইবনে-কাসীর)।
আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। (ইবনে-কাসীর)।

সূরা ফালাকের আরবি বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, নামকরণ, শানে নুযুল ও বিষয়বস্তু...
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা! আমাদের সবাইকে তিন কুল তথা ‘সূরা ইখলাস, ফালাক্ব এবং নাস’ এই ৩টি সূরার ওপর বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূরা আল-ফালাক (আরবি: سورة الفلق‎‎; নিশিভোর)। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনের ১১৩ তম সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৫ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। 

সূরা আল-ফালাক মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কনো কোনো বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এর পাঁচ আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পরবর্তী সূরা আন-নাসকে একত্রে মু’আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।

নামকরণ :

সূরা ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সঙ্গে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে ‘মু’আওবিযাতাইন’ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাজিলও হয়েছে একই সঙ্গে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।

শানে নুযুল :

সূরা আল ফালাক ও পরবর্তী সূরা নাস একই সঙ্গে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহুদি রাসূলুল্লাহ‌ (সা.) এর ওপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হজরত জিবরাঈল (আ.) আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহুদি জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রাসূলুল্লাহ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দু’টি পড়ে ফুক দেয়ায় গিরুগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং সে (সা.) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।

হজরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হজরত আয়েশা (রা.)-কে বললে: আমার রোগটা কি, আল্লাহ তায়ালা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বলল: ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল: কে জাদু করেছে? উত্তর হলো, ইহুদিদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ’সাম জাদু করেছে।

আবার প্রশ্ন হলো: কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হলো, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হলো, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হলো, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সে কূপে গেলেন এবং বললেন: স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।

মুসনাদে আহমদের রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই অসুখ ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।

সূরা ফালাক: আরবি, বাংলা ভাষায় অর্থসহ উচ্চারণ এবং বাংলায় অনুবাদ-

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অনুবাদ: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

(১)
قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ
ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।

অনুবাদ : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,

(২)
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
মিন শাররি মাখালাক্ব।

অনুবাদ : তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,

(৩)
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব।

অনুবাদ : অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,

(৪)
وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّـٰثَـٰتِ فِى ٱلۡعُقَدِ
ওয়া মিন শাররিন নাফ্‌ফাসাতি ফিল্‌ উকাদ।

অনুবাদ : গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে

(৫)
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।

অনুবাদ : এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

হাদিস :

আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। (ইবনে-কাসীর)।

সহিহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের এর বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি এমন আয়াত নাজিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থা ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোনো সূরা নেই।

এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ওকবা ইবনে আমেন-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অতঃপর মাগরিবের নামাজে এ সূরাদ্বয়ই তিলাওয়াত করে বললেন, এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো। অন্য হাদিসে তিনি প্রত্যেক নামাজের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। (আবু দাউদ, নাসায়ী)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেন, বলো। আমি আরজ করলাম, কি বলব? তিনি বললেন, সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। (মাযহারী)।