• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

দুদকের মামলার পর পালিয়েছেন ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি!

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২০  

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন পালিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা লক্ষী কুঞ্জ বাসা থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তিনি মাদারবাড়িস্থ নালাপাড়ায় প্রদীপ কুমার দাশের বড় বোনের বাসায় রয়েছেন।

২৩ আগস্ট ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আয়ের অভিযোগে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২)/২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায়।

প্রদীপের ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করার অভিযোগ থাকলেও মামলায় শ্বশুর অজিত কুমার কারনকে আসামি করা হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী জারি করে দুদক। ১২ মে তারা দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। ওই সম্পদ বিবরণীতে ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ করেন। এরমধ্যে দুদক সম্পদ বিবরণী যাচাই করে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার তথ্য পান। একই সাথে ঘোষিত সব সম্পদ অর্জনের স্বপক্ষে আয়ের কোন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে পারেননি। এরমধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আয়ের মাধ্যমে অর্জন করেন বলে প্রমাণ পান দুদক।

প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন তার বাবা অজিত কুমার কারনের কাছ থেকে দানপত্রমূলে জমিসহ একটি ৬ তলা বাড়ি দানপত্র হিসেবে পান বলে সম্পদ বিবরণীতে প্রকাশ করেন। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দানপত্র দলিলটি (নং-১১৮৮২) সম্পাদন হয়।

দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, প্রদীপের ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের মাধ্যমে বাড়িটি তার শ্বশুর নেন। যা পরে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারনকে (অজিত কুমার কারনের মেয়ে) দানপত্র করেন। এজাহারে বলা হয়, চুমকির পিতা বাড়িটি দানপত্র করে দিলেও তার (চুমকি) অন্য দুই ভাই ও এক বোনকে কোনো বাড়ি দান করেননি। অথচ তার দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদও নেই। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ গোপন করতে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরে তার স্ত্রীর নামে দানপত্র করে নিয়ে ভোগ দখল করছেন।

চুমকি একজন গৃহিনী হলেও তাকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। চুমকি কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। পরবর্তীতে মৎস্য ব্যবসা ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে চুমকির নামে কোনো কমিশন ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি মামলা এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

২০১৩ সাল পর্যন্ত চুমকি মৎস্য ব্যবসা থেকে দেড় কোটি টাকা আয়ের হিসাব আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করেন। এর সপক্ষে ২০০২ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পাঁচটি পুকুর নগদ সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য ইজারা নেয়ার চুক্তিপত্র দুদকে দাখিল করেন। কিন্তু দুদক যাচাই করে দেখে, চুমকি একজন গৃহিনী এবং তার স্বামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ১৯৯৫ সালে এসআই হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০০২ সালে তার কিংবা তার স্বামীর ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় ছিল না।

প্রদীপের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে মৎস্য ব্যবসা সম্পর্কিত কোনো লেনদেন না পাওয়ার কথাও মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী। এজাহারে বলা হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয় যে, আসামি চুমকি মৎস্য ব্যবসা থেকে কোনো আয় করেননি। তিনি তার স্বামী প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করার অসৎ উদ্দেশে ভুয়া মৎস্য ব্যবসা প্রদর্শন করে ওই আয় দেখিয়েছেন।

আসামি চুমকি কারন তার আয়ের স্বপক্ষে কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোন প্রামাণ্য রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেননি বলে মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন। সবমিলিয়ে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আয়ের দায়ে এ মামলা করা হয়।