• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দেখি বাংলার রূপঃ

দেখে এলাম বাইতুল আমান

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

বরিশাল’তো বটেই, স্বদেশ ছাড়িয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই এক অপূর্ব নান্দনিক স্থাপত্যের নির্দশন বায়তুল আমান মসজিদ। এর অপূর্ব সুন্দর নির্মান সৌকর্য্য আর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবেন না এমন কেউ আছেন বলে মনে হয়না। প্রথম দেখায় আমি কি যে হতবাক, বিমুগ্ধ এবং অভিভূত হয়েছি। গতানুগতিক, আটপৌরে এক বিকালে মসজিদটি যখন দেখতে বেরিয়েছিলাম জানা ছিলোনা কি বিপুল বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে আমার জন্যে। সড়ক পথে শহর ছেড়ে অতি সাধারণ ঘর-বাড়ী, বাজার-ঘাট দোকানপাঠ পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই মুগ্ধতা আর বিস্ময়ের ঘোর লেগেছে চোখে। গ্রামীন পরিবেশে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল আকাশের পটভূমিতে মধ্য প্রাচ্যীয় বিখ্যাত মসজিদগুলোর অনুকরনে নির্মিত বাইতুল আমান মসজিদ দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ তবাক হয়েছি আমি–এত সুন্দর ! আজকে আমি বরং আপনাদের জানাই এই মসজিদটির নানা কথা। যেন চাইলে ১টি বেলা আপনারাও সেখানে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সহজেই। 

বরিশাল শহর থেকে ২২ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে বরিশাল-বনারীপাড়া রোড়ের পাশে উজিরপুর থানার গুটিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত বায়তুল আমান মসজিদ। গুটিয়া মসজিদ নামেই যা সমধিক পরিচিত। ২০০৩ সালে মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে নির্মান শেষে মসজিদটি সর্ব সাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটি অন্যতম বৃহৎ একটি জামে মসজিদ। মসজিদটির ভীত নির্মাণে মুসলমানদের কাছে পবিত্র এমন বেশ কিছু জায়গা যেমন- আরাফার ময়দান, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়ার কবরস্থান, খলিফাদের কবরস্থান, কাবা শরীফ, মসজিদে রহমত, জাবালে রহমত, জাবালে নূর প্রভৃতির মার্টি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি গড়ে উঠেছে ১৪ একর জমির উপর। বর্তমানে এখানে মসজিদের সঙ্গে ঈদগাহ, এতিমখানা, কবরখানা, রেষ্ট হাউজ, পুকুর, হেলিপ্যাড, গাড়ি পাকিং, ফুলবাগান প্রভৃতি রয়েছে। কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকেই বাম দিকে ১৯৩ ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট বিশাল মিনার সহ ২০ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। গোলাপী, সাদা, ক্রিম ও হলুদ রঙে তৈরী মসজিদটির সৌন্দর্য্য এককথায় অপূর্ব। মসজিদের সামনে ফিরোজা এবং নীল রঙের মিশেলে টাইলস নির্মিত ২টি ফোয়ারা। মসজিদের প্রবেশ দ্বারের সামনে, ভিতরে চারকোণার চার গম্বুজের নীচে এবং উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে শোভা পাচ্ছে আল কুরআনের বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফী। মাঝখানে কেন্দ্রিয় গম্বুজের চারপাশে বৃত্তাকারে সুরা আর রহমানের ক্যালিগ্রাফী। সুদৃশ্য দরজা, মহামূল্যবান ঝাড়বাতি, সিরামিক, গ্লাস, মার্বেল এবং গ্রানাইট পাথরে সজ্জিত মসজিদের অভ্যন্তর ভাগ। মসজিদের ভিতর ৪০০ মুসুল্লী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এবং বাইরের অংশে আরো ৫০০০ মুসুল্লী একত্রে নামাজ আদায় করেত পারেন। মহিলাদের নামাজের জন্যেও পৃথক অংশে আছে পৃথক নামাজ পড়ার ব্যবস্থা। এছাড়া সুবিশাল ঈদগাহ ময়দানটিতে একসঙ্গে ২০,০০০ লোকের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। 

মসজিদটির ৩টি দিক–দুই সাইড এবং পিছনের পুরোটা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পরীখা। যা নিরাপত্তার পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মসজিদের সামনেই শান্ত, স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ এক মনোরম পুকুর। সাদা মোজাইক টাইলসে নির্মিত পুকুরের ওজুর ঘাটটি পুকুরটিতে যোগ করেছে আভিজাত্য আর সৌন্দর্য্য। একই সাইজের ২টি কাঠবাদাম গাছ ঘাটটিকে ছায়াময়, মায়াময় করে জড়িয়ে আছে যেন।

মসজিদের উত্তরপাশে আছে ২তলা একটি ভবন। এখানে কমপ্লেক্সের অফিস, এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। পূর্ব দক্ষিণ কোণে কবরখানা। পিছনের অংশে হেলিপ্যাড এবং বাগান। পুরো কমপ্লেক্স জুড়েই অপরুপ সবুজের ছোঁয়া। প্রায় একই উচ্চতার সারিবাধা নানা গাছ, পরীখায় রাজহাঁসের দূরন্ত বিচরণ। এ’তো গেল দিনের ছবি। অসংখ্য আলোক বর্তিকায় সজ্জিত হয়ে রাতের বায়তুল আমান যেন আরো নয়নাভিরাম। তাই এখানে গেলে আসর এবং মাগরিবের ওয়াক্তকে সামনে রেখে যেতে পারেন বিকালের দিকে। নামাজ’তো পড়বেনই। একই সঙ্গে দিন এবং রাতের মসজিদের শোভা উপভোগ করতে পারবেন তাতে। 

কিভাবে যাবেনঃ    শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানারীপাড়া/ স্বরূপকাঠীর বাসে যেয়ে নেমে পড়বেন গুটিয়া বাসস্ট্যান্ডে। ভাড়া নেবে ২৫ টাকা। রিজার্ভ অটো/ মাহেন্দ্র নিয়েও সরাসরি পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে। আবার চাইলে শেয়ারে মাহেন্দ্র/ অটো নিয়ে যেতে পারবেন এখানে। সময় লাগবে ৪০/৪৫ মিনিট।

মসজিদ কমপ্লেক্সের বাইরে ছোটখাট কিছু দোকানপাঠ, হোটেল আছে। এখানে বা গুটিয়া বাসস্ট্যান্ডে মিলবে গুটিয়ার বিখ্যাত সন্দেশ। ভোজনরসিকরা টেষ্ট করে দেখতে পারেন। একটু অন্যরকম দেখতে, খেতেও বেশ মজার। ১ বেলা চাইলে এসব জায়গায় সুলভ মূল্যে খাওয়া দাওয়াও করে নিতে পারবেন।  

    ইদানিং কালে বাইতুল আমান মসজিদটি ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি টুরিষ্ট স্পট হিসাবেও নাম করেছে। মুসলমানরা’তো বটেই অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও এটি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে যান। বিস্তৃর্ণ প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে এমন আধুনিক, অপূর্ব স্থাপনা এদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। সময় করে ১টি বেলা তাই এখানে কাটিয়ে আসলে নতুন অভিজ্ঞতা এবং মুগ্ধতায় মাখামাখি হয়ে ফিরবেন নিশ্চিত।