• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দ্রব্যমূল্যের অনৈতিক দাম বাড়ালে যেসব আজাবে পতিত হয় মানুষ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

ব্যবসা-বাণিজ্য ইসলামে অনেক সম্মানজনক কাজ। আল্লাহ তাআলা ব্যবসাকে করেছেন হালাল। এ হালাল ব্যবসায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক শ্রেণীর অসাধু নামধারী মজুদদার মানুষকে কষ্ট দেয়া। তাদের মজুদদারীর কারণে সর্ব সাধারণের সীমাহীন কষ্ট ও ক্ষতি হয়। ইসলামে নিঃসন্দেহে এটি হারাম কাজ।

মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় হালাল খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করে কিংবা কৃত্রিমভাবে বাড়ানোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুদদারি বলা হয়। রাসুলে আরাবি মজুদদার ব্যক্তিকে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মজুদদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তাহলে চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর যদি মূল্য বেড়ে যায় তাহলে আনন্দিত হয়।’ (মিশকাত)

অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধির জন্য গোপন স্থানে দ্রব্যসামগ্রী আটক রেখে মানুষকে কষ্টে ফেলা শুধু ঘৃনিত কাজই নয় বরং তা অত্যন্ত জঘন্য পাপ ও এক প্রকার শোষণ হিসেবে চিহ্নিত।

অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের কষ্ট তৈরি করা এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলাম চরম অনৈতিক, ঘৃণ্য ও নিষিদ্ধ কাজ। হাদিসে এসব মজুদদার ও অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (মিশকাত)

যারা এসব অনৈতিক কাজ করে তাদের শুধু পাপ হবে এমনটিই নয় বরং তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম মহামারী ও দ্ররিদ্রতা। হাদিসে এসেছে-

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মর্মে সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে, তবে আল্লাহ তাআলা তার উপর মহামারী ও দারিদ্র্যতা চাপিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ, বাইহাকি)
>> ‘যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির অসৎ উদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে আগুনের পাহাড়ে উঠিয়ে শাস্তি দেবেন।’

যে সব অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যমূ্যে বৃদ্ধি করে তাদের ব্যাপারে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-

>> ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুদ করে রাখে সে বড় পাপী।’ (মুসলিম)
>> ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুদদার হয় অভিশপ্ত।’
>> ‘বিভ্রান্ত লোকই শুধু মজুদদারী করে।’ (ইবনে মাজাহ)
>> ‘যে মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যদ্রব্য চল্লিশ দিন যাবত মজুদ করে রাখবে আল্লাহ তাকে দূরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দিয়ে শাস্তি দিবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
>> ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ করবে তার সঙ্গে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’
>> ‘মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখে, সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট।’ (মিশকাত)

কৃত্রিমভাবে প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার মধ্যে এক শ্রেণির লোক সুখ খুঁজে পায়। অথচ তারা অনুধাবন করে না যে, মানুষকে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে কষ্ট দেয়া মারাত্মক গোনাহ।

অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের হৃদেয় মানবিক বিষয় এবং গোনাহের উপলব্দি আসে না। না তারা পরকালের ভয়াবহতাকে ভয় করে।

বর্তমানে মানুষের কষ্টকর পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ, সরকার ও বিভিন্ন ধর্মীয় ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সভা সেমিনার করে সব অন্যায় ও দুর্নীতি বন্ধের আবেদন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

পেঁয়াজ ও লবনসহ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে সমাজের মানুষের উপর আপতিত একটি বিপদ। এ থেকে মুক্তি লাভে রাষ্ট্রীয় কার্যকর ভূমিকার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।

তাই সার্বিকভাবে দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানুষকে সাধারণ জীবন-যাপনে আশ্বস্ত করতে যেমন অসাধূ ব্যবসায়ী ও মজুদদারদে আত্মোপলব্দি প্রয়োজন। তেমনি রাষ্ট্রেরও প্রয়োজন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

কৃত্রিক সংকট ও অনিয়মতান্ত্রিক মজুদদারী যেমন ইসলামে হারাম ও গোনাহের কাজ। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা সব ব্যবসায়ীদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।