• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

নতুন প্রজাতির মাছ ‘বাংলাদেশিয়াস’ বৈশ্বিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২০  

নতুন প্রজাতির একটি সামুদ্রিক মাছ শনাক্তকরণের মধ্য দিয়ে সামুদ্রিক মাছের বৈশ্বিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো বাংলাদেশ। গবেষকরা দেশের নামানুসারে মাছটির নাম দিয়েছেন ‘বাংলাদেশিয়াস’। আর স্থানীয় ভাষায় মাছটিকে বলা হচ্ছে ‘পেট্টলি’।

দেশের কয়েকজন প্রাণী গবেষক বঙ্গোপসাগরে কোরাল মাছের প্রজাতি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ গবেষণার সময় নতুন প্রজাতির এ মাছ খুঁজে পান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সামুদ্রিক মাছের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন এক প্রজাতি।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এ সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এদের দৈহিক গঠন, বাহ্যিক আকৃতি এবং ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়। দেশের নামের সঙ্গে মিল রেখে মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে ‘পোমাসেন্ট্রাস বাংলাদেশিয়াস’।

বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায় বলে প্রজাতিটির ইংরেজি নাম দেয়া হয়েছে ‘বেঙ্গল ডেমোইসেলি’ এবং সেন্টমার্টিনের মানুষের কাছে পরিচিতির ওপর ভিত্তি করে মাছটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘পেট্টলি’।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৪২২ প্রজাতির ড্যামসেল মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রজাতির মাছ প্রবাল প্রাচীরের আশপাশে থাকে এবং সেখানেই বংশবিস্তার করে। এরা দৈর্ঘ্যে ১৫ সেন্টিমিটারের কম হয়, তবে কিছু প্রজাতি ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা অনেক চতুর এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের। এরা দেখতে রঙিন ও আকর্ষণীয় হওয়ায় এদের অনেক প্রজাতি ১৪ ইঞ্চির নিচে অ্যাকুরিয়াম পেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সেন্টমার্টিনে বাংলাদেশের জলসীমায় ডিএনএ বারকোডিংয়ের মাধ্যমে কোরাল মাছের প্রজাতি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার সময় ‘পোমাসেন্ট্রাস বাংলাদেশিয়াস’ প্রজাতিটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে প্রায় দুই বছর শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অ্যাকুয়াটিক বায়োরিসোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির একদল গবেষক এ গবেষণা করেছেন

গবেষক দলে ছিলেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার এবং মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন ও ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জায়িদুল ইসলাম, পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত কুমার নিয়োগী্‌ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার। তাদের গবেষণা প্রবন্ধটি ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জার্নাল জ্যুট্যাক্সাতে ছাপা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, সেন্টমার্টিনে বায়োডাইভার্সিটি অ্যানালাইসিসের সময় প্রবালের মধ্যে কোরাল মাছের মতো কিছু মাছ দেখতে পাই। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন গবেষণাগারে রেখে এদের দৈহিক গঠন, বাহ্যিক আকৃতি ও ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছটির যে রেজাল্ট পেয়েছি, তার সঙ্গে অন্য কোনো মাছের মিল নেই। অর্থাৎ মাছটি এর আগে কোথায়ও পাওয়া যায়নি। পরে দেশের নামানুসারে আমরা নতুন মাছটির নামকরণ করি।

তিনি আরো বলেন, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে ‘ইকোসিস্টেম বাউন্ডারি’ নির্ণয় করে এ মাছের যত্ন নিতে হবে। আধুনিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ পেলে আরো ভালো গবেষণা বিশ্বকে উপহার দেয়া সম্ভব হবে।