• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

নিজেদের হেফাজতেই ব্যস্ত হেফাজতে ইসলাম

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২১  

হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের কমপক্ষে ৩০ নেতা আটক হয়েছেন গত একমাসে। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ও সাম্প্রতিক আন্দোলন-তাণ্ডবের মামলায় আটক হয়েছেন আরও শতাধিক কর্মী । সংগঠনের সাবেক আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর নেপথ্যেও অভিযোগ বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। অন্যান্য নেতাকর্মীরাও আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। বিভিন্ন মামলার বিচার শুরু হলে হতে পারে কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন শাস্তি। ইতোমধ্যে মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। বলা যায় হেফাজত এখন নিজেদের হেফাজতেই ব্যস্ত।

কৌশল হিসেবে কমিটির বিলুপ্তি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। একাধিক মামলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে অনেককে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বর ঘটনায়, আবার কাউকে সাম্প্রতিক ঘটনার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কৌশল হিসেবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্তি করা হয় ২৬ এপ্রিল। একই দিনে আহ্বায়ক কমিটিও করা হয়। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আমির পদে জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে নুরুল ইসলাম জিহাদী।

নাম প্রকাশে অনিচচ্ছুক হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা যে যার মতো করে বক্তব্য, বিবৃতি দিয়েছেন। এতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কমিটি থাকলে একেক জন একেক বক্তব্য বিবৃতি দিতে পারেন, তাতে পরিস্থিতি আবার ঘোলাটে হতে পারে। এজন্য কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করা হয়েছে আহবায়ক কমিটি।

জানা গেছে, মোদির বাংলাদেশ আগমনে সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চে দেশজুড়ে সহিংসতার চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সে সময়ে সরকারি অফিস, স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়।

এরপরই ১১ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মামলায় হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মনঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হারুন ইজহার, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমেনী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহঅর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ঢাকা মহানগর হেফাজতের সহ-সভাপতি মাওলানা কোরবান আলী, ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমেদ প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের সময় তাণ্ডবের ঘটনায় ৫৩টি মামলা হয়। হেফাজতের সঙ্গে সরকারে সমঝোতার কারণে এতোদিন মামলাগুলোর তদন্ত থেমে ছিল। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম ফের সহিংসতা শুরু করলে নতুন মামলার পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলোও সচল হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে মামুনুল হকের ধরা পড়া ও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা- নতুন করে বিতর্কের মধ্যে ফেলেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে।

শফীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত

অন্যদিকে হেফাজতের প্রয়াত আমির আহমেদ শফীর মৃত্যুর জন্য সংগঠনের কিছু নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার পরিবার ও অনুসারীদের। শফীর মৃত্যুর পর তার অনুসারীদের অনেকেই বাদ পড়েন নতুন কমিটি থেকে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ বিষয়ে তদন্ত করে।

চট্টগ্রামের একটি আদালতে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। যার মধ্যে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীও রয়েছেন। যদিও বাবুনগরী এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেন।

এদিকে গ্রেফতার শুরুর পর থেকেই সরকারে সঙ্গে আলোচনার জন্য তৎপর হয় হেফাজতে ইসলামের নেতারা। কয়েকদফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তারা। ১৯ এপ্রিল রাতে নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ অন্য নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

অন্যদিকে, শফীর অনুসারীরাও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে আসতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। রবিবার রাতে মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাঈনুদ্দীন রুহী, হাসনাত আমিনী, আলতাব হোসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

নতুন কর্মসূচি নয়

আপতত নতুন কোনও ইস্যুতে কর্মসূচি বা আন্দোলেন না যেয়ে নিজেদের সুরক্ষা নিয়েই তৎপর হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের এক নেতা বলেন, এখন আন্দোলনের সময় নয়। সংগঠনের নেতাকর্মীরা হুমকির মুখে। তাদের নিরাপত্তাই এ মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য। যে কোনও কৌশলেই হোক নেতাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ ৪ মে প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক মহাসচিব ও আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে নেতাদের অন্যতম দাবি ছিল নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার।

হেফাজতের সাবেক মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে শুধু হেফাজত নয়, সাধারণ মুসল্লিরাও আছেন। আমরা গ্রেফতার ও হয়রানির বন্ধের দাবি জানিয়েছি। যেসব মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি। দাবিগুলো মন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন।