• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

পালাবদলের সুরে ২০২৩ বিশ্বকাপের ‘মহড়া’

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২১  

প্রত্যেক সিরিজের আগে দল ঘোষণার সময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কয়েকটি নাম। সে জায়গাটা তিন-চারটির বেশি নয়। কারণ ১৫ জনের স্কোয়াডে অন্তত ১০-১১ জন থাকেন প্রত্যাশামতো। বাকি জায়গাগুলোয় চমক জাগিয়ে নতুন কোনও মুখ কিংবা লম্বা সময় বাইরে থাকা কাউকে সুযোগ দেন নির্বাচকেরা।

এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে ঘোষিত দল নিয়ে তেমন আলোচনাই হওয়ার কথা ছিল। ২৪ জনের প্রাথমিক দল হলেও দুই তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন ও শরিফুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি আলাদা চমক তৈরি করার কথা। সেটা হয়তো কিছুটা করেছেও। তবে দল ঘোষণার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসেছে মাশরাফি মুর্তজার বাদ পড়া!

কেন নেই মাশরাফি?

বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি নামটাই আসলে যথেষ্ট। ওয়ানডের ২৪ সদস্যের দলে সেই তার না থাকাটা বড় ঘটনাই হয়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ের দৃশ্যপটে এটাই আসল বাস্তবতা। বয়স পেরিয়ে গেছে তার ৩৭, এর ওপর আবার তিনি পেসার। তবে এখানে ঢাল হিসেবে কেউ কেউ সামনে আনতে পারেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স। লম্বা সময় পর মাঠে ফিরে যিনি টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন। কিন্তু যদি ভবিষ্যৎ কিংবা ২০২৩ বিশ্বকাপের দিকে নজর দেওয়া যায়, তাহলে?

মাশরাফি সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না- এটা বলার জন্য জ্যোতিষী হওয়ার দরকার পড়বে না। ২০১৯ বিশ্বকাপেই যেখানে শেষ দেখা হয়েছিল তার, সেখানে দুই বছর পরের বিশ্বকাপে তার খেলার বাজি ধরার লোক থাকার কথা নয়। তাছাড়া ওয়ানডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও তার পক্ষে নেই। অন্য কারও কথা বাদ দিন, মাশরাফি নিজেও অনেকবার বলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপই তার শেষ।

তাহলে পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে। আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের স্কোয়াডে মাশরাফির না থাকা। সমান্তরালে ২০২৩ বিশ্বকাপে চোখ রেখে পালাবদলের সুর বাজছে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে।

তরুণ পেসারদের আধিপত্য

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে সফল পেসার কে? সবার আগে আসবে মোস্তাফিজুর রহমানের নাম। চোট কাটিয়ে তাসকিন আহমেদও স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই দুজন লম্বা সময় ধরে খেলছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। তাদের সঙ্গে নতুন আলো হয়ে ধরা দিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের পর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও হাসান মাহমুদ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেটে। ‍যুব বিশ্বকাপজয়ী শরিফুল ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ১০ ম্যাচে তার শিকার ১৬ উইকেট।

ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে তারা জায়গা পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডের প্রাথমিক স্কোয়াডে। নির্বাচকেরা তাদের ‍সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ছকই কষেছেন।

মাশরাফিকে বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার স্পষ্টই বলেছেন, দেশের ক্রিকেটের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সেটা কীভাবে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাশরাফির থাকা মানে তিনি খেলবেন। সেক্ষেত্রে তরুণ যে পেসাররা আছেন, তাদের কেউ একজন নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হারাবেন। টিম ম্যানেজমেন্ট চায়নি দুই-একটি সিরিজে মাশরাফিকে খেলিয়ে ভবিষ্যৎ পেসার তৈরির পথটা বন্ধ রাখতে। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে প্রমাণ করে নিজেদের জায়গার দাবিও জানিয়ে রেখেছেন হাসান কিংবা শরিফুলের মতো পেসাররা।

প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেই...

এমনিতেই ক্রিকেটে খারাপ সময় যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এর ওপর আবার বাংলাদেশে দ্বিতীয় সারির দল পাঠাচ্ছে তারা। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন হাবিবুল। একে ঘরের মাঠের সিরিজ, এর ওপর আবার খর্বশক্তির দল আসছে খেলতে, তাই বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এই সিরিজ দিয়েই নতুনদের পরখ করে নেওয়ার চিন্তা করছে। তাছাড়া নির্বাচক হাবিবুল জানিয়েছেনও, ‘সেরা পাঁচ সিনিয়র খেলোয়াড় আমাদের যতদিন সার্ভিস দিতে পারবে, সেটি আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু আমাদের তো তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে। নতুনদের আমরা গড়ে দিতে চাই, সিনিয়রদের ছত্রছায়াতে। এজন্য আমরা ছোট ছোট করে একটা একটা করে টিমে অন্তর্ভুক্ত করছি, যাতে ব্যালেন্সটা ঠিক থাকে। আমরা যে দলটা তৈরি করতে চাইছি সেটি আসন্ন সিরিজকে লক্ষ্য করে নয়, আমাদের আগামী বিশ্বকাপ নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে।’

২০২৩ বিশ্বকাপে চোখ

২০২৩ বিশ্বকাপের আয়োজক ভারত। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কন্ডিশনে মিল থাকায় এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো সুযোগ আছে। বিসিবি তাই এখন থেকেই ভারতের বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছে। করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিল দল, তাই নতুন শুরুতে ওই বিশ্বকাপে চোখ রেখে ওয়ানডে দল তৈরি করছে।

প্রধান নির্বাচক নান্নু সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার বলেছেন, ‘অবশ্যই ২০২৩ বিশ্বকাপ ঘিরে আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টও আমাদের কিছু পরিকল্পনা দিয়েছে। ২০২১ সাল থেকেই কিন্তু প্রচুর ম্যাচ আছে আমাদের। এজন্য ওয়ানডের দলটা একটু বড় করা হয়েছে। ২০২৩ বিশ্বকাপকে ফোকাস করে টিম ম্যানেজমেন্টে যে পরিকল্পনা দিয়েছে, সেভাবেই আমরা মাশরাফি ছাড়া এই সিরিজটা শুরু করছি।’

যুব বিশ্বকাপ জয়ের প্রভাব

২০২০ সালের শুরুতে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ। যুব বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটারদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের ভাবনা থাকে পরবর্তী স্টেজে নিয়ে যাওয়ার। বিসিবিও সেই পথে হাঁটেছে। হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারকে রেখে ট্রেনিং করানো হয়েছে। ১৫ জনের থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রাথমিক দলে সুযোগ পেয়েছেন দুজন। পেসার শরিফুলের সঙ্গে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান পারভেজ হোসেন ইমন আছেন ২৪ জনের দলে।

শরিফুলের মতো ইমনও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন। ফরচুন বরিশালের হয়ে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর বিপক্ষে অনবদ্য সেঞ্চুরি করে আলোড়ন তোলেন ইমন। ওই টুর্নামেন্টে খুলনার বিপক্ষে একটি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপজয়ী এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে ভবিষ্যতের পথে হাঁটতে চাইছে বিসিবি।

অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেল

সময়ের পালা বদলে মাশরাফি যে আর ওয়ানডে দলে থাকছেন না, সেটি আগেই বেশ কয়েকবার আকার-ইঙ্গিতে কিংবা স্পষ্ট বলেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। ভবিষ্যতের দিকে চোখ রাখলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তার না থাকাটা যৌক্তিক। মাশরাফি নিজেও পেশাদার মনোভাবে দেখছেন বিষয়টি। তাই বলে টিম ম্যানেজমেন্ট পুরোপুরি তারুণ্যের শক্তিতে জোর দিচ্ছে, বিষয়টি তেমনও নয়। তামিম ইকবালকে অধিনায়ক করে ঘোষিত স্কোয়াডে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ আছেন। তাদের সঙ্গে হাসান, শরিফুল, নাসুম আহমেদ, ইমন, ইয়াসির আলী, মোহাম্মদ নাঈমদের মতো তরুণদের সুযোগ দিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে চাইছে বিসিবি।