• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

পৃথিবীর প্রথম ‘জীবন্ত’ রোবট আবিষ্কার

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২১  

কিছুদিন আগেও রোবট বললেই মনে হত কঙ্কালের মতো সরু লিকলিকে কোনো ধাতব মূর্তির কথা। এখন রোবটের চেহারা অনেকটা মানুষের মতো হয়েছে। তবে তার শরীর একইরকম শক্ত; ধাতু বা প্লাস্টিক দিয়েই তৈরি। তার শরীরে এখনও মানুষের মতো কোমলতা কিংবা প্রাণ আসেনি। তবে এই বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলেন প্রযুক্তিবিদরা। অনেক গ‌বেষণার পর সম্প্রতি গবেষকরা তৈরি করলেন পৃথিবীর প্রথম জীবন্ত রোবট, থুরি জেনোবট।

টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। সম্প্রতি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘সায়েন্স রোবটিক’ বিজ্ঞান পত্রিকায়।

একটি নির্দিষ্ট রোবটের কাজের পরিসর খুবই কম। হয় তা বড়ো ধরনের কাজ করতে পারে, নাহলে অতি সূক্ষ্ম কোনো তথ্য সংগ্রহের কাজ। এই দুই ধরণের কাজ একসঙ্গে করার জন্যই প্রয়োজন কোমল ও স্থিতিস্থাপক রোবট। যে রোবট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটিতে ব্যবহৃত হ‌চ্ছে অত্যাধুনিক জেনোবট। যেগুলোর হাঁটাচলা, সাঁতার কাটতে পারা কিংবা কোনো ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।

সবচেয়ে আশ্চর্যকর হচ্ছে, ধাতব উপাদানের বদলে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ জীবন্ত কোষ দিয়ে। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও তা সত্যি। একটি ব্যাঙের প্রজাতির স্টেম কোষ দিয়েই তৈরি হয়েছে জেনোবটগুলি। 

গবেষণা দলটির মতে, জেনোবট কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। আবার প্রথাগত রোবটের বৈশিষ্ট্যও উপস্থিত নেই সেখানে। একইসঙ্গে জীবন্ত প্রাণী এবং যন্ত্রের সত্তা লুকিয়ে রয়েছে এর মধ্যে।

জেনোবটগুলো আবিষ্কা‌রের নেপ‌থ্যে রয়েছে বেশ লম্বা গল্প! গবেষকরা জানাচ্ছেন, যেকোনো জীবেরই প্রাণের জাদুমন্ত্র লুকিয়ে থাকে ভ্রুণের মধ্যে। ধীরে ধীরে সেখান থেকেই বিকশিত হয় গোটা দেহ। একটি মাত্র কোষ বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন ধরণের কোষ সৃষ্টি করে। তাদের প্রত্যেকের কার্যকারিতাও ভিন্ন। কেউ সাহায্য করে স্নায়বিকতন্ত্রের বিকাশে। আবার কেউ তৈরি করে পেশিকলা। এই ভ্রুণের মধ্যেই বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু বদল এনেছেন বিজ্ঞানীরা। যার ফলে বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে নতুনভাবে শারীরিক গঠন তৈরি করাও সম্ভব হয়েছে।

উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, ব্যাঙের ফুসফুসে উপস্থিত ‘সিলিয়া’ নামের দেহাংশটিকেই বিজ্ঞানীরা রোবটে ব্যবহার করেছেন চলাচলের অঙ্গ হিসাবে।

জেনোবট মূলত একটি ক্ষুদ্র মাংসপিণ্ড। আয়তন ১ মিলিমিটারেরও কম। তবে ছোটো হলেও এই রোবটগুলো এমন কিছু কাজ করতে সক্ষম, যা সাধারণত ধাতব বা প্লাস্টিকজাত পদার্থে তৈরি রোবট করতে পারে না। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল ক্ষতপূরণ। হ্যাঁ, মাঝ বরাবর কেটে ফেললেও নতুন করে পুনর্জন্ম নিতে পারে জেনোবটের দেহাংশগুলো। তাছাড়া খাবার বা কোনো জ্বালানি ছাড়াই তারা বেঁচে থাকতে পারে টানা কয়েক সপ্তাহ।

জেনোবট এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই রোবটের হাত ধরেই প্রযুক্তির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে বলেই অভিমত গবেষকদের।