• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বঙ্গবন্ধু সরব, পররাষ্ট্র দফতর নিস্পৃহ কেন?

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২০  

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের উদাসীনতার ফলে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শত শত বাঙালি ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে অবস্থান করছে। কিন্তু দেশে ফিরে আসতে পারছে না। যদিও দেশে প্রত্যাবর্তনের পরে থেকেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আটকে পড়া বাঙালিদের ফেরানোর বিষয়ে কথা বলে আসছিলেন। এমনকি পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের নির্যাতনের বিভিন্ন সংবাদ ১৯৭২ সালের শুরু থেকেই পত্রিকাগুলো প্রকাশ করছিল।

পূর্বদেশ এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৪ জুনের পত্রিকায়। যেখানে তারা বলছে, আটকে পড়া বাঙালিরা পাকিস্তানে তাদের সবকিছু হারিয়ে কোনও প্রকার ভারতের মাটিতে পৌঁছে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের ছাড়পত্রের জন্য। কিন্তু এক-দুই মাস পার হওয়ার পরেও তাদের হাতে সে ছাড়পত্র পৌঁছায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা বাঙালিদের ৩৮ জনের একটি দল কয়েকদিন আগে ভারতে পৌঁছায়। মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট) এর বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত শহরে এসে পৌঁছানো শত শত বাঙালির যে অবস্থা তিনি দেখেছেন তা রীতিমতো মর্মান্তিক ও উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন যে পাকিস্তানে টাকা পয়সা সব হারিয়ে যে সমস্ত বাঙালি প্রাণ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে এসে পৌঁছাচ্ছে, অপেক্ষার পরও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতর তাদের ছাড়পত্র দেন না। এ ব্যাপারে কোনও দায়িত্ব নেই, এমন গা ছাড়া ভাব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সেসব এলাকার কোনও মিল নেই। অসহ্য গরম এবং প্রায় ৫০ মাইল দূর থেকেই শহরে পানি আনতে হয়। এই অবস্থা সেখানে। এ পরিস্থিতিতে তারা এখানে ওখানে কোনোমতে ছাড়পত্রের অপেক্ষায় বেঁচে আছেন। তিনি দৈনিক পূর্বদেশকে জানান যে, তিনি আসার সময় কেবল ভুজ শহরেই ১৪৫ জন এরকম নিঃস্ব বাঙালিকে দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৪ জন বাঙালি সীমান্তে এসে জমা হচ্ছে।

এদিকে পাকিস্তানে বাঙালি নির্যাতন চলছে—এই মর্মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ বাণী নিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের সদর দফতরে যান  জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পল মার্ক হেনরি । বঙ্গবন্ধু পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে উল্লেখ করেন এবং বিশ্বনেতাদের ওপরে চাপ প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।

গুজবে কাজ দেবেন না

আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ শ্রেণির লোকজন ঐতিহাসিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের নানা প্রকার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। এসব কিছুর প্রতি কর্ণপাত না করার জন্য মন্ত্রী জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। আসন্ন ৭ জুন লালবাহিনীর জনসভাকে ঘিরে নানা রকমের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ করেন তিনি। ওই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা করার কথা রয়েছে। লাল বাহিনীর সদস্যরা শহরের প্রধান সড়কের শোভাযাত্রা সহকারে সেদিন মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা শহরের রেশনের দোকানদারদের কাছে কয়েক লাখ ভুয়া রেশন কার্ড রয়েছে বলে পৃথক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দোকানদাররা দীর্ঘদিন ধরে রেশন কার্ড সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তোলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের রেশনের দোকানের সংখ্যা ৫৮২। তবে বিভিন্ন সময়ে জনসাধারণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই রেশনের দোকানের সংখ্যা ৩০/৪০ করে বাড়ানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের সময় এ সংখ্যা ছিল ৩শ’র কিছু বেশি। উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে অনেক বাঙালি রেশন দোকানের ব্যবসা ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গেছে এবং তাদের সঙ্গে বেশ কিছু সংখ্যক অবাঙালি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছে। এ অবস্থায় প্রায় ১০ লাখ বাড়তি কার্ড কি করে ইস্যু হলো সেটি প্রধান জিজ্ঞাসার বিষয় প্রশ্ন তোলা হয় ওই প্রতিবেদনে।