• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

‘বন্দুকের নল নয় জনগণই ক্ষমতার উৎস’

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বন্দুকের নল নয়, জনগণই তাঁর ক্ষমতার উৎস। যারা বন্দুকের শক্তিতে বলিয়ান—দেশকে তারা ধ্বংস করে ছাড়বে। ইতিহাসে জনগণের ইচ্ছাশক্তির কাছে পেশিশক্তির পরাজয়ের ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর এখনও তাঁর স্বপ্ন হলো—জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা।’

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের এই দিনে গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন।

বাঙালিরা সব এক এবং ঐক্যবদ্ধ

বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে আরও জানা যায়, গাইবান্ধার জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, আসন্ন নির্বাচন আরেকবার প্রমাণ করে দেবে যে বাঙালিরা সব এক এবং ঐক্যবদ্ধ। সোনার বাংলা গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে তারা তাঁর সঙ্গে রয়েছে। গোলমাল বাঁধিয়ে যারা দেশের সাধারণ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, তারা তাদের ক্ষেত্রে সফল হবে না। কারণ, জনগণ তাঁর সঙ্গে রয়েছে। এদিন সকালে রংপুর শহর থেকে ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত গাইবান্ধার কলেজ ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন—তিনি নিজে কিংবা তাঁর পার্টি আওয়ামী লীগ একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আর এ জন্যই তাঁর সরকার দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করছে, কীভাবে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি তাঁর অফিসারদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ হবে।

 ১৯৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত পত্রিকার প্রধান শিরোনামদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক

বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক এবং বাংলাদেশের স্বাধীন জনগণ একটি শোষণমুক্ত সমাজে বাস করুক, এটাই তাঁর কামনা। জাতির জনক এই জনসভায় ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের সব সম্পদ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হবে, এটাই তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, চোর-ডাকাত ও লুটেরাদের জঘন্য কার্যকলাপে প্রিয় দেশবাসী একটা রাত শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, এ কথা শুনলে তিনি বেদনা বোধ করেন। জনগণকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, মুষ্টিমেয় দুষ্কৃতকারীর দিন শেষ হয়ে গেছে। তাঁর সরকার এসব দুষ্কৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ এবং এসব দুষ্কৃতকারীকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন, যাতে বাংলাদেশের তারা আর মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে।

প্রয়োজনে আরেকবার দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবেন

বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতার আগে তিনি যেমন দেশকে দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন, তেমনই দুর্নীতি ও চক্রান্তকারী বিদেশিদের দেশ থেকে নির্মূল করার জন্য তিনি আরেকবার তাঁর দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবেন। বিশাল এক জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে কলেজ ভবনের ছাদে বিপুল সংখ্যক লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। জনতা তাঁর ওপরে আস্থাশীল কিনা, বঙ্গবন্ধু তা জানতে চাইলে সমবেত জনতা হর্ষধ্বনি সহকারে দুই হাত তুলে প্রিয় নেতার প্রতি তাদের আস্থা ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার মাঝে মাঝে জনতা বারবার ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’  ধ্বনি তোলেন।

বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, জনগণ যেকোনও মূল্যের বিনিময়ে দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে। কারণ, এর জন্য তারা নজিরবিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকতে এসেছে এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী এরপর হেলিকপ্টারযোগে নীলফামারী যান এবং সেখানে আরেকটি বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। বিকালে তিনি নাটোরে উত্তরা গণভবনে রাতযাপনের জন্য যান।

 দি বাংলাদেশ অবজারভার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩নিলফামারীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু

নীলফামারীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, জাতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিই তাঁর স্বপ্ন। রংপুর শহরের ৪০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে স্থানীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর জীবনে দুটি স্বপ্ন ছিল, একটি হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, যা এখনও অর্জিত হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষুধা, বাসস্থান সমস্যা, বেকারত্ব ও নিরক্ষরতা থেকে মুক্তি অর্জনের মধ্য দিয়েই তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতেই হবে, তবে তা রাতারাতি করা সম্ভব নয়।

কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উৎপাদন না বাড়ালে সোনার বাংলা গড়ার সম্ভব নয়। কৃষি খাতে সরকারের জোরদার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, চলতি ৫শ’ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে কৃষি উন্নয়নের জন্য একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং গ্রামবাসীর কল্যাণের জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য গ্রামগুলোকে অবশ্যই উন্নত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন—তিনি তাঁর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। দখলদার পাকবাহিনীর সঙ্গে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই বিশ্বাসঘাতকদের অনেককে তিনি ক্ষমা করেছেন। যারা নিরপরাধ দেশের আইন অনুযায়ী তারা মুক্তি পাবে।

তিনি বলেন, বিগত সাধারণ নির্বাচনে প্রদত্ত জনগণের ম্যান্ডেট বলেই তাঁর সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারতো, কিন্তু জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী বলেই তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২৫ বছর ধরে দেশবাসী একটি সংবিধানের জন্য সংগ্রাম করেছে। সংবিধান দেওয়া হয়েছে। সংবিধান চালু হওয়ায় ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরে এসেছে, যাতে তারা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।