• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বন্ধ হলো ৬৩ লাখ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২১  

দীর্ঘদিন লেনদেন না করায় ৬৩ লাখ নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব নিবন্ধিত হিসাবের মধ্যে ৪৭ লাখ হিসাবই শিওরক্যাশের মাধ্যমে খোলা হয়েছিল। এছাড়া বন্ধ হওয়া বাকি ১৬ লাখ হিসাবের বেশিরভাগই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ইউক্যাশ বন্ধ থাকায় এর গ্রাহকদের হিসাবও বন্ধ করা হয়। তবে ব্যাংকটির নতুন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘উপায়’ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করায় ইউক্যাশের গ্রাহকরা মাইগ্রেশন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের এমএফএসের আওতায় খোলা হিসাব বন্ধ হওয়ায় গত এপ্রিলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) নিবন্ধিত হিসাব কমে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজারে নেমেছে। গত মার্চে এমএফএসের নিবন্ধিত হিসাব ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ। সেই হিসাবে গত এপ্রিলে নিবন্ধিত হিসাব কমার হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘এ হিসাবগুলোতে দীর্ঘদিন লেনদেন না হওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেননা মোবাইল ফোন সিম ১৮ মাস ব্যবহার না হলে ওই সিম অন্য কারও নামে বিক্রি করতে পারে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব ১৫ মাস ধরে লেনদেন না হলে তা বন্ধ করে দিতে হবে।’

এ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে ১৫ মাস ধরে লেনদেন না হওয়ায় এ সিমগুলো আর ব্যবহার হচ্ছে না বলে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এ সিমগুলো অন্য গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হলে, মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে জমা থাকা টাকাগুলো নতুন সিমের গ্রাহকের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে হিসাবগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানান মো. মেজবাউল হক।

জানা গেছে, শিওরক্যাশের মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করত। তবে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ চালু হওয়ার পর উপবৃত্তির টাকা বিতরণ শুরু করে। এ কারণে শিওরক্যাশ এ সেবাটি বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় ৪৭ লাখ হিসাব দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে।

এছাড়া ইউক্যাশ বন্ধ করে নতুন সেবা ‘উপায়’ চালু করেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। উপায়ের হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড করপোরেট কমিউনিকেশন জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউক্যাশের গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গোপন পিন নম্বর রিসেট করে উপায়ের গ্রাহক হিসেবে মাইগ্রেশন করতে পারছেন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যারা এরই মধ্যে পিন রিসেট করেছেন তারা উপায়ের গ্রাহক হয়েছেন।’ গত মার্চে উপায় চালু হওয়ার পর থেকে এ সেবার গ্রাহক ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

তবে এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা কমলেও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে। আলোচিত সময়ে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজারে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০-তে।

মার্চের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেনও বেড়েছে। এমএফএসে এপ্রিল মাসে লেনদেন হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড় লেনদেন প্রায় ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে ডাক বিভাগের মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এর তথ্য নেই। তাহলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বাড়ত বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতনভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইলে ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করারও সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯৬২ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয়েছে ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

এদিকে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী বাজেটের রূপরেখা উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমএফএস প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস কোম্পানির করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।