• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বাচ্চাওয়ালি তোপ চালাতে ভয় পেতেন সেরা সেরা যোদ্ধারা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০১৯  

মুর্শিদাবাদ শহর। এই জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলার নবাবি শাসন, আবার ইংরেজ লুঠেরাদের কাছে বাংলা এবং তারপর সমস্ত ভারতের দাসত্বও এই শহর থেকেই আরম্ভ হয়েছিল। নবাবদের শহর বলে কথা! এখানকার দেওয়ালে দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যায় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সেই টানটান রোমাঞ্চের গল্প, এখানকার প্রত্যেকটা ঘাসে স্মৃতি হয়ে লুকিয়ে আছে দক্ষ প্রশাসক নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র দাপট, বর্গি আক্রমণের সময়ে নবার আলিবর্লি খাঁ-র দুরন্ত চতুরতা কিংবা পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার হাহাকার। এই শহরের অলিতে গলিতে ইতিহাস যেন কথা বলে। তারই অমোঘ আকর্ষণে পর্যটকরা বারবার ছুটে যান মুর্শিদাবাদে – হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, ইমামবাড়া, বাচ্চাওয়ালি তোপ, মতিঝিল পার্ক, জাহানকোষা কামান, দাফরাগঞ্জ প্রাসাদের মধ্যে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করতে।মুর্শিদাবাদের সবথেকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথী নদীর পুব দিকে তিন তলা বিশাল এক বাড়ি। এই অট্টালিকার উত্তরে রয়েছে বাংলার সবথেকে বড়ো ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি আর ইমামবাড়ার মাঝখানে মাঠের মধ্যে সাদা মদিনা দেখতে পাওয়া যাবে। এটা সিরাজ-উদ-দৌলার সময়ে তৈরি হওয়া একমাত্র স্থাপত্যের নিদর্শন। মদিনার পাশেই রাখা আছে একটা বিশাল কামান। বিখ্যাতও বটে। এই কামানের নাম বাচ্চাওয়ালি তোপ। যিনি হাজারদুয়ারি তৈরি করিয়েছিলেন, সেই নবাব হুমায়ুন জা-র আমলে এই বিরাট কামান ভাগীরথী নদীর গর্ভ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বাচ্চাওয়ালি তোপ কবেকার, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। কিছু মানুষ মনে করেন, এই তোপ সম্ভবত ১৩-১৪ শতকের গৌড়ের কোনো সুলতানের আমলে বানানো হয়েছিল। কেউ বলেন, এটি ছিল বাংলার সুলতান ইলিয়াস শাহের কামান। তবে সব থেকে প্রচলিত মত হচ্ছে, ঢাকার বিশিষ্ট লোহার মিস্ত্রি জনার্দন কর্মকার এটা তৈরি করেছিলেন ১৬৪৭ সালে। এই জনার্দন কর্মকার আরেকটি বিখ্যাত কামান বানিয়েছিলেন, তার নাম জাহানকোষা।

 

বিশাল এই বাচ্চাওয়ালি কামান ১৮ ফুট লম্বা, ব্যাস ২২ ইঞ্চি আর প্রায় ৭৬৫৭ কিলোগ্রাম ভারী। এই কামান দাগার জন্য প্রয়োজন হত ১৮ সের মশলা বারুদ। তবে কামানটার নাম ‘বাচ্চাওয়ালি’ কীভাবে হল? এই নিয়ে একটা গল্প লোকমুখে প্রচলিত আছে। বলা হয়, এই কামান দাগা হয়েছিল মাত্র একবারই। কিন্তু সেই তোপ দাগার শব্দ এত তীব্র ছিল যে আশেপাশের বহু গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটে যায়। সেই কারণেই এর নাম দেওয়া হয় বাচ্চাওয়ালি তোপ। তারপর থেকে এই ভয়ংকর কামান আর ব্যবহার করা হয় না।

তথ্যসূত্র - ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ, ডেলিহান্ট।